পাতা:বিদ্যাসাগর গ্রন্থাবলী (শিক্ষা ও বিবিধ).djvu/৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8br বিদ্যাসাগর-গ্রন্থাবলী—শিক্ষা হইয়াছিল যে, ১৭৭২ খৃঃ অব্দে, যখন কোম্পানি বাহাদুর আপন হস্তে রাজশাসনের ভার লইলেন, তখন তাহাদিগকে, ডাকাইতীর দমনের নিমিত্ত, অতি কঠিন আইন জারী করিতে হইয়াছিল। র্তাহারা এরূপ আদেশ করিয়াছিলেন যে, ডাকাইতকে, তাহার নিজ গ্রামে লইয়া গিয়া, ফঁাসি দেওয়া যাইবেক ; তাহার পরিবার, চির কালের নিমিত্ত, রাজকীয় দাস হইবেক ; এবং সেই গ্রামের সমুদয় লোককে দণ্ডভাজন হইতে হইবেক । এই অরাজক সময়েই, অধিকাংশ ভূমি নিষ্কর হয়। সম্রাট বাঙ্গালার সমুদয় রাজস্ব ইঙ্গরেজদিগকে নিৰ্দ্ধারিত করিয়া দিয়াছিলেন বটে ; কিন্তু তাহ, কলিকাতায় আদায় না হইয়া, মুরশিদাবাদে আদায় হইত। মালের কাছারাও সেই স্থানেই ছিল। মহম্মদ রেজা খা, রাজা দুর্লভরাম, রাজা কান্ত সিংহ, এই তিন ব্যক্তি বাঙ্গালার রাজস্ব সংক্রান্ত সমস্ত কাৰ্য্যের নির্বাহ করিতেন । তাহারাই সমস্ত বন্দোবস্ত করিতেন, এবং রাজস্ব আদায় করিয়া কলিকাতায় পাঠাইয়া দিতেন । তৎকালে, জমীদারের কেবল প্রধান করসংগ্রাহক ছিলেন। র্তাহার, পূৰ্ব্বোক্ত তিন মহাপুরুষের ইচ্ছাকৃত অনবধানের গুণে, ইঙ্গরেজদিগের চক্ষু ফুটিবার পূৰ্ব্বে, প্রায় চল্লিশ লক্ষ বিঘা সরকারী ভূমি ব্রাহ্মণদিগকে নিষ্কর দান করিয়া, গবৰ্ণমেণ্টের বার্ষিক ত্রিশ চল্লিশ লক্ষ টাকা ক্ষতি করেন । লার্ড ক্লাইবের প্রস্থানের পর, বেরিলষ্ট সাহেব, ১৭৬৭ খৃঃ অব্দে, বাঙ্গালার গবর্ণর হইলেন। পর বৎসর, ডিরেক্টরের, কৰ্ম্মচারীদিগের লবণ ও অন্যান্ত বস্তু বিষয়ক বাণিজ্য রহিত করিবার নিমিত্ত, চূড়ান্ত হুকুম পাঠাইলেন। র্তাহার এইরূপ আদেশ করিয়াছিলেন যে, দেশীয় বাণিজ্য কেবল দেশীয় লোকেরা করিবেক ; কোনও য়ুরোপীয় তাহাতে লিপ্ত থাকিতে পরিবেক না । কিন্তু, য়ুরোপীয় কৰ্ম্মচারীদিগের বেতন, অতি অল্প ছিল ; এজন্য, তাহারা এরূপও আদেশ করিয়াছিলেন, বেতন ব্যতিরিক্ত, সরকারী খাজানা হইতে, তাহাদিগকে শতকরা আড়াই টাকার হিসাবে দেওয়া যাইবেক ; সেই টাকা সমুদায় সিবিল ও মিলিটারি কৰ্ম্মচারীরা যথাযোগ্য অংশ করিয়া লইবেন। ক্লাইবের প্রস্থানের পর, কোম্পানির কার্য্য সকল পুনৰ্ব্বার বিশৃঙ্খল হইতে লাগিল । আয় অনেক ছিল বটে ; কিন্তু ব্যয় তদপেক্ষা অধিক হইতে লাগিল । ধনাগারে দিন দিন বিষম অনাটন হইতে আরম্ভ হইল। কলিকাতার গবর্ণর, ১৭৬৯ খুঃ অব্দের অক্টোবর মাসে, হিসাব পরিষ্কার করিয়া দেখিলেন, অনেক দেন৷ হইয়াছে, এবং আরও দেন। না করিলে চলে না । তৎকালে, টাকা সংগ্ৰহ করিবার এই রীতি ছিল, কোম্পানির যুরোপীয় কৰ্ম্মচারীরা যে অর্থসঞ্চয় করিতেন, গবর্ণর সাহেব, কলিকাতার ধনাগারে তাহ জমা লইয়া,