পাতা:বিদ্যাসাগর গ্রন্থাবলী (শিক্ষা ও বিবিধ).djvu/৭১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যৎকালে, আমি কলিকাতাস্থ রাজকীয় সংস্কৃত বিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করিতাম, উচ্চ শ্রেণীর ছাত্রদিগকে, মধ্যে মধ্যে, গদ্যে ও পদ্যে, সংস্কৃতরচনা করিতে হইত। সংস্কৃত রচনায় প্রবৃত্ত হইতে আমার, কোনও মতে, সাহস হইত না ; এজন্য, ঐ রচনার সময় উপস্থিত হইলে, আমি পলায়ন করিতাম । আমার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল, আমরা সংস্কৃত ভাষায় রীতিমত রচনা করিতে সম্পূর্ণ অক্ষম । যদি কেহ সংস্কৃত ভাষায় কিছু লিখিতেন, ঐ লিখিত সংস্কৃত প্রকৃত সংস্কৃত বলিয়া, আমার প্রতীতি হইত না । এজন্য, আমি, সংস্কৃত ভাষায় রচনা করিতে, কদাচ অগ্রসর হইতাম না । ১৮৩৮ খৃষ্টীয় শাকে, এই নিয়ম হয়, স্মৃতি, স্যায়, বেদান্ত, এই তিন উচ্চ শ্রেণীর ছাত্রদিগকে, বার্ষিক পরীক্ষার সময়ে, গদ্যে ও পদ্যে, সংস্কৃতরচনা করিতে হইবেক ; যাহার রচনা সৰ্ব্বাপেক্ষ উৎকৃষ্ট হইবেক, সে, গদ্যে এক শত টাকা, ও পদ্যে এক শত টাকা, পারিতোষিক পাইবেক । এক দিনেই উভয়বিধ রচনার নিয়ম নিৰ্দ্ধারিত হয় ; দশট। হইতে একটা পৰ্য্যন্ত গদ্যরচনা, একটা হইতে চারিট পর্য্যন্ত পদ্যরচনা । গদ্যপদ্যপরীক্ষার দিবসে, দশটার সময়ে, সকল ছাত্র, পরীক্ষাস্থলে উপস্থিত হইয়া, লিখিতে আরম্ভ করিলেন । অলঙ্কার শাস্ত্রের অধ্যাপক, পূজ্যপাদ প্রেমচন্দ্র তর্কবাগীশ মহাশয় আমায় অতিশয় ভাল বাসিতেন । তিনি, পরীক্ষাস্থলে আমায় অনুপস্থিত দেখিয়া, বিদ্যালয়ের তৎকালীন অধ্যক্ষ চিরস্মরণীয় কাপ্তেন জি. টি. মার্শল মহোদয়কে বলিয়া, বলপুৰ্ব্বক আমায় তথtয় লইয়া গিয়া, এক স্থানে বসাইয়া দিলেন । আমি বলিলাম, আপনি জানেন, সংস্কৃত রচনায় প্রবৃত্ত হইতে অামার, কোনও মতে, সাহস হয় না ; অতএব, কি জন্তে, আপনি আমায় এখানে আনিয়া বসাইলেন । তিনি বলিলেন, যাহা পার, কিছু লিখ ; নতুবা, সাহেব অতিশয় অসন্তুষ্ট হইবেন । আমি বলিলাম, আর সকলে দশটার সময় লিখিতে আরম্ভ করিয়াছে ; এখন এগারটা বাজিয়াছে ; এই অল্প সময়ে, আমি কত লিখিতে পারিব । এই কথা শুনিয়া, সাতিশয় বিরক্তিপ্রকাশ করিয়া, তিনি, যা ইচ্ছা কর, বলিয়৷ চলিয়া গেলেন । সত্যকথনের মহিমা গদ্যরচনার বিষয় ছিল । আমি, এগারটা হইতে বারটা পৰ্য্যন্ত, বসিয়া রহিলাম, কিছুই লিখিতে পারিলাম না। পূজ্যপাদ তর্কবাগীশ মহাশয়, আমি কি করিতেছি, দেখিতে আসিলেন ; এবং, কিছুই না লিখিয়া, বিষন্ন বদনে, বসিয়া আছি, ইহ দেখিয়া, নিরতিশয় রোষপ্রকাশ করিলেন । আমি বলিলাম, মহাশয়, কি লিখিব,