পাতা:বিদ্যাসাগর গ্রন্থাবলী (সাহিত্য).pdf/৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৵৹

মঙ্গলের জন্য এখনও প্রয়োজন আছে। এই গ্রন্থাবলীর মধ্য দিয়া তাহা সম্ভব হইবে, এবং অন্ততঃ আরও অর্ধ-শতাব্দীকাল ধরিয়া, এ যুগের ছেলেরা বিদ্যাসাগর মহাশয়ের ভাষা ও মনের স্পর্শ পাইয়া, নিজেরা উপকৃত হইয়া উহার মহত্ব প্রণিধান করিতে পারিবে।

 ১২২৭ বঙ্গাব্দের ১২ই আশ্বিন তারিখে (খ্রীষ্টাব্দ ১৮২০, ২৬শে সেপ্টেম্বর) বিদ্যাসাগর ভুমিষ্ঠ হন, এবং ১২৯৮ বঙ্গাব্দের ১৩ই শ্রাবণ (খ্রীষ্টাব্দ ১৮৯১, ২৯শে জুলাই ) পরলোক গমন করেন। প্রায় একাত্তর বৎসর জীবিত থাকিয়া তিনি বাঙালী সমাজে রামমোহন- যুগের সূত্রপাত হইতে বঙ্কিম-যুগের শেষ অবধি প্রত্যক্ষ করিয়াছেন; বাঙ্গালা সাহিত্যে, ফোর্ট-উইলিয়ম কলেজের যুগ হইতে রবীন্দ-যুগ পর্যন্ত—সূচনা হইতে পরিপূর্ণ বিকাশ পর্যন্ত লক্ষ্য করিয়াছেন; সতীদাহ-নিবারণ হইতে বিধবাবিবাহ-প্রবর্তন ও বহুবিবাহ-আন্দোলন হইতে তিন-আইনে বিবাহ প্রবর্তন পর্যন্ত যাবতীয় সংস্কার, তাহার জ্ঞাতসারেই ঘটিয়াছে। তাঁহার মৃত্যুর পূর্বে ও পরে সমসাময়িক সকল বিখ্যাত ব্যক্তিই তাৃহার জীবনী, কীর্তি ও প্রতিভা সম্বন্ধে অল্পবিস্তর আলোচনা করিয়াছেন। মৃত্যুর পরে শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ব (তাঁহার সহোদর), বিহারীলাল সরকার ও চণ্ডীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় বাঙ্গালা ভাষায়, ও সুবলচন্দ্র মিত্র ইংরেজী ভাষায়, চারিটী সুবৃহৎ জীবনী রচনা ও প্রকাশ করিয়া, তাহার একটা মোটামুটি পরিচয় আমাদিগের নিকট প্রচার করিয়াছেন। এগুলিতে তত্ত্ব ও তথ্যের অনেক ভুল ও পরস্পর-বিরোধী উক্তি থাকিলেও, বিদ্যাসাগর মানুষটীকে বুঝিতে অসুবিধা হয় না তাহার বহুমুখী কীর্তিরও একটা হিসাব পাওয়া যায়। এতদ্ব্যতীত, শিবনাথ শাস্ত্রী, হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, রজনীকাস্ত গুপ্ত, যোগীন্দ্রনাথ বসু, কৃষ্ণকমল ভট্রাচার্য, রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী, রমেশচন্দ্র দত্ত, রাজনারায়ণ বসু, নগেন্দ্রনাথ সোম, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জ্ঞানেন্দ্রনাথ চট্রোপাধ্যায়, শিবপ্রসন্ন ভট্টাচার্য, মন্মথনাথ ঘোষ প্রভৃতিও, বিভিন্ন প্রবন্ধে, বক্তৃতায়, পুস্তিকা, সমসাময়িক কোনও প্রসিদ্ধ ব্যক্তির জীবনীগ্রন্থে, অথবা কথোপকথনে, বিদ্যাসাগর মহাশয়ের জীবনী, কীর্তি ও মহত্ত্ব বিষয়ক নানা আলোচনা লিপিবদ্ধ করিয়া গিয়াছেন। এগুলির মধ্যে রজনীকান্ত গুপ্ত, কৃষ্ণকমল ভট্যাচার্য, রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী ও রবীন্দ্রনাথের লিখিত বা কথিত প্রসঙ্গগুলিই সবিশেষ উল্লেখযোগ্য। বিদ্যাসাগরের কর্মময় জীবনের যে-দিক্‌টা এতদিন পর্যন্ত সরকারী কাগজ-পত্রের মধ্যে রেকর্ড-রুমের দপ্তরের অন্তরালে আত্মগোপন করিয়া ছিল, এই গ্রন্থাবলীর অন্যতম সম্পাদক শ্রীযুক্ত ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয় তাঁহার ‘বিদ্যাসাগর-প্রসঙ্গ’ পুস্তকে সে দিক্‌টাও উদঘাটিত করিয়াছেন; এবং শ্রীযুক্ত সুকুমার সেন তাহার ‘বাঙ্গালা সাহিত্যে গদ্য’ পুস্তকে