দস্যু তস্করেরা সতত শঙ্কিত থাকিত। সেই সময়ে ঐ প্রদেশের কোন বলশালী সঙ্গোপ—এক দস্যুদল গঠন করিয়াছিল। তাহাদের অত্যাচারে লোকে সদা ভয়ে দিন যাপন করিত। একদিন শত্রুঘ্ন, জ্যেষ্ঠের অনুরোধে একাকী সেই দস্যুদলকে এমন শিক্ষা দিয়াছিলেন যে, তদবধি তাহারা আর নিকটবর্ত্তী গ্রামসমূহের উপর কোন প্রকার অত্যাচার করিত না। তাঁহার দৈহিক বলের জন্য ঐ প্রদেশের সকল তাঁহাকে ‘কলির ভীম’ বলিত।
পরদিবস ভট্টাচার্য মহাশয় বিরুদ্ধবাদীদিগকে ডাকাইয়া বলিলেন, “দেখ, যদি সকলে প্রাণের মমতা রাখ, তবে নিরন্ত হও। বৈবাহিক মহাশয় অতিশয় নিরীহ ও সদাশয় ব্যক্তি। ইঁহার দ্বারা তোমাদের কখনও কোন প্রকার অনিষ্ট সাধিত হয় নাই। ইনি সতত তোমাদের মঙ্গলচিন্তায় নিরত। ঈদৃশ হিতাকাঙ্ক্ষী নিরীহ গ্রামবাসীর উপর অত্যাচার করা লোকতঃ ধর্ম্মতঃ অতীব গহিত কার্য্য। তোমাদিগকে সাবধান করিয়া দিতেছি, অতঃপর আর ইঁহার উপর কোন প্রকার অত্যাচার করিও না। আর যাবৎ ইঁহার গৃহ নির্মাণ না হয়, তাবৎ আমি বীরসিংহে অবস্থিতি করিব। আমার বল বিক্রমের কথা তোমাদের অবিদিত নাই। আমি স্বগ্রামে প্রত্যাবর্ত্তন করিয়া যদি শুনিতে পাই যে, তোমরা পুনরায় ইঁহার উপর কোন অত্যাচার করিয়াছ, তাহা হইলে আমি তোমাদিগকে এরপ শিক্ষা দিব যে, সকলে বীরসিংহের পৈতৃক বাস্তুু ত্যাগ করিয়া পলায়ন করিতে বাধ্য হইবে।” যাহা হউক ভট্টাচার্য্য মহাশয়ের তেজ ও সহৃদয়তা মিশ্রিত উক্তি শ্রবণে অতঃপর বিরুদ্ধবাদীরা ঠাকুরদাসের উপর অত্যাচার করিতে নিরস্ত হইয়াছিল।
সেই সময়ে ঈশ্বরচন্দ্র ঘোষাল জাহানাবাদের ডেপুটী ম্যাজিস্ট্রেট্ ছিলেন। বিদ্যাসাগর মহাশয় একসময় প্রসঙ্গক্রমে এই সকল অত্যাচারের কথা তাঁহার কর্ণগোচর করেন। ঘোষাল মহাশয় মফঃস্বল ভ্রমণ কালে একদিন ছদ্মবেশে বীরসিংহে আসিয়া উপস্থিত হইলেন। ঠাকুরদাস পরম সমাদরে তাঁহার পরিচর্য্যা করিলেন। শেষে ঘোষাল মহাশয় বলিলেন, “আমি এখানে আসিয়াছি কেন কিছু, কি জানিতে পারিয়াছেন?” ঠাকুরদাস বিস্মিত হইয়া বলিলেন, “না, আমি ত তাহার কিছুই জানি না।” তখন ঘোষাল মহাশয় বলিলেন, “আমি বিদ্যাসাগর মহাশয়ের নিকট শনিলাম যে, বিধবাবিবাহসম্বন্ধে বিরুদ্ধবাদীরা আপনার উপর অমানুষিক অত্যাচার করে। আপনি তাহাদের নাম বলুন। আমি শাসনের ব্যবস্থা করিব।” ঠাকুরদাস বিষন্নবদনে বলিলেন, “ঈশ্বর ছেলেমানুষ, সে বিদেশে থাকে, দেশের কোন সংবাদ রাখে না। কাহার মুখে কি শুনিয়াছে, তাহাই আপনাকে বলিয়াছে। গ্রামের কাহারও সহিত আমার অসদ্ভাব নাই। তাহার কথা শুনিয়া নিরীহ গ্রামবাসীদিগকে শাসন করা আপনার ন্যায় বুদ্ধিমান ব্যক্তির কর্ত্তব্য নহে।” ঘোষাল মহাশয় ঈষৎ হাস্য করিয়া বলিলেন, “সমস্তই বুঝিলাম। আপনার ন্যায় পিতার ঔরসে জন্মগ্রহণ করিয়াছেন বলিয়াই-