উচিত। সত্যে অনুরাগ, ন্যায়পরতা ও অধ্যবসায় থাকিলে আত্মসংযম অভ্যস্ত হয়। অতএব চরিত্রগঠন করিতে হইলে সত্যের প্রতি অনুরাগের প্রয়োজন। সত্যে অনুরাগ থাকিলে, মনে কপটতা থাকিতে পারে না, মনে কপটতা না থাকিলে দুষ্কার্য্যেও প্রবৃত্তি হয় না।
সচ্চরিত্রের মহত্ত্ব সর্ব্বাপেক্ষা অধিক। লোকে সদ্গুণের সমাদর করে, কিন্তু সাধুচরিত্রের পুজা করিয়া থাকে। চরিত্রবান্ ব্যক্তি যে কার্যেই প্রবৃত্ত হউন, তাহাতেই উন্নতিলাভ করিতে পারেন। সকলেই তাঁহার প্রতি বিশ্বাস ও সম্মান প্রদর্শন করিয়া থাকেন। যিনি প্রকৃত সুখে সুখী হইতে বাসনা করেন, তাঁহার চরিত্রের নির্ম্মলতা রক্ষা করা আবশ্যক। কারণ, চরিত্রবান্ ব্যক্তিই আত্মপ্রসাদ লাভে সমর্থ হন। তাঁহার চিত্তে প্রীতি, সুখ ও শান্তি সদা বিরাজমান থাকে।
ভগবতী দেবীর বিবিধ সদ্গুণের কথা আমরা পুর্ব্বই উল্লেখ করিয়াছি। এবং ঐ সকল সদ্গুণের সমষ্টিই তাঁহার চরিত্র। কিন্তু তাঁহার সদ্গুণাবলীর মধ্যে এক একটি বিশেষ লক্ষণ আছে। সেইজন্য আমরা ‘চরিত্র মাহাত্ম্য’ নামে এই অধ্যায়ের অবতারণা করিলাম।
ভগবতী দেবী দয়ার মূর্ত্তিমতী প্রতিকৃতি ছিলেন। তাঁহার এই দয়া ও পরোপকার প্রবৃত্তিই তাঁহাকে অমর করিয়া রাখিয়াছে। তাঁহার এই দুই প্রবৃত্তি সাধারণ মানবের ঐ দুই প্রবৃত্তি অপেক্ষা অনেক উচ্চস্তরে প্রতিষ্ঠিত। তাঁহার এই দয়া ও পরোপকার প্রবৃত্তি বৈরাগ্যসম্ভূত নহে! সংসারে এরূপ নরনারীর অভাব নাই, যাঁহারা অতুল ঐশ্বর্য্য ও বিপুল বিভবের অধীশ্বর বা অধীশ্বরী। কিন্তু শমনের শাসনদণ্ডের কঠোর আঘাতে একে একে তাঁহাদের সংসারে সমস্ত বন্ধনই ছিন্ন হইয়াছে। অতুল বিভব সম্ভোগের কেহই নাই। এরপ অবস্থায় অতুল ঐশ্বর্য্য ও বিপুল বিভব তাঁহাদের হৃদয়ের শান্তি স্থাপন করিতে অসমর্থ। তখন তাঁহারা পারত্রিক মঙ্গলসাধনের জন্য মুক্তহস্তে বিপুল অর্থদান করিয়া অন্যের দুঃখমোচনে প্রবত্ত হন। তাঁহাদের এরূপ দয়া ও পরোপকার প্রবৃত্তি প্রশংসার যোগ্য হইলেও উহা বৈরাগ্যসম্ভুত। কিন্তু ভগবতী দেবীর সংসারবন্ধন পূর্ণমাত্রায় বিদ্যমান ছিল। পুত্র, কন্যা, পৌত্র, পৌত্রী, দৌহিত্র, দৌহিত্রী প্রভৃতি লইয়া তাঁহার বৃহৎ পরিবার, অনেক আত্মীয় স্বজন। ইহা সত্ত্বেও তিনি বসুধাবাসীজনগণকে আত্মীয় বলিয়া ভাবিতে পারিয়াছিলেন, তাঁহার বিশ্বব্যাপী বিশাল হৃদয়ে সকলকে স্থান দিয়াছিলেন—ইহাই তাহার দয়া গণের বিশেষত্ব। তাঁহার দয়ারূপ মন্দাকিনীর স্বাদুধারা, একপ্রাণতা, সমদর্শিতা ও শ্রদ্ধারূপ ত্রিধারার সম্মিলনে সৃষ্ট হইয়াছিল। ইহাও তাঁহার দয়াগুণের আর এক বিশেষত্ব। বিপন্ন ব্যক্তিকে দেখিবামাত্রই তাঁহার হৃদয় বিচলিত হইত। অশ্রুবিসর্জ্জন করিতে করিতে তাহার বিপন্মোচনের জন্য তিনি যত্নবতী হইতেন। তাঁহার এই দয়া প্রবৃত্তির মূলে সহানুভূতি বিদ্যমান ছিল। অপরের দুঃখকে স্বকীয় দুঃখ বলিয়া অনুভব