গাম্ভীর্য্যময় সুনীল পর্ব্বতরাজি, অপূর্ব্ব বৈচিত্র্যময়ী ধরিত্রী, সৌরজগতের কেন্দ্রীভূত এবং উদ্ভিজ্জ ও জীবজগতের প্রসবিতা সবিতৃদেব, অনন্ত ব্যোমব্যাপী সুবিচিত্র জ্যোতিষ্কমণ্ডলী—সকলেরই আদি ও পরিণাম,—ঐ জন্ম ও মৃত্যু; প্রকাশ ও বিনাশ; উৎপত্তি ও লয়! সকলেই আসে ও কিছুদিনের জন্য বিশ্বে নিজ নিজ লীলা প্রদর্শন করিয়া অনন্তে বিলীন হয়!
সমস্তই যায়!—কিছুই কি থাকে না? মানুষ মরে, কিন্তু মত্যুকেও উপহাস করে, এমন কি কিছু তাহার মধ্যে আছে?—মানুষের কীর্ত্তিই একমাত্র অবিনশ্বর!—কীর্ত্তিই তাহাকে চিরদিন অমর করিয়া রাখে!—মানুষের এই কীর্ত্তিই স্মরণ করিয়া অনন্তকাল ব্যাপিয়া জগৎ তাহার জন্য শোক প্রকাশ করে!
শোক কি?—মর্ম্মন্তুদ করুণ বিলাপই কি শোক? না!—শোক অর্থে মনে হয়—ইহা স্মৃতির উপাসনা!—এই স্মৃতির উপাসনাতেই মনুষ্যত্বের গৌরব! অনন্তকাল ব্যাপিয়া মানুষ মানুষের জন্য অনুরাগ প্রকাশ করিবে,— ইহাই প্রকৃত শোক!—সেইজন্য মনে হয়, শোক,—স্মৃতির উপাসনা! শোক,— অনন্ত সাধনা!
বঙ্গসন্তানগণ! পুণ্যশীলা ভগবতী দেবীর চিতাভস্ম গ্রহণ করুন।—অনন্তকাল ব্যাপিয়া এই আদর্শ জননীর স্মৃতির উপাসনা করুন।—তাঁহার সাধনা করুন। বঙ্গজননীগণ।—সতীর চিতাভস্ম গ্রহণ করুন!—যাঁহারা পুণ্যশীলা, তাঁহারা পুণ্যের পূজা করুন! যাঁহারা আদর্শ জীবন গঠন করিতে যত্নশীলা, তাঁহারাও পুণ্যের আরাধনা করুন!—সকলে আদর্শজননী হউন!—ইহাই আপনাদের নিকট বঙ্গসন্তানগণের বিনীত প্রার্থনা!—আপনারাই বঙ্গের প্রতি গৃহের গৃহলক্ষী,—আপনারাই বঙ্গের প্রতি পর্ণকুটীরের অধিষ্ঠাত্রী দেবী,—আপনাদের পীযূষসুধাপানে বঙ্গসন্তান শশিকলার ন্যায় অনুদিন বর্দ্ধিত,—আপনাদের স্নেহ মমতায় বঙ্গসন্তান চিরদিন পরিপুষ্ট,—আপনাদের শিক্ষায় দীক্ষায় বঙ্গসন্তান শিক্ষিত ও দীক্ষিত,—আপনাদের আশীর্ব্বাদ তাহাদিগের একমাত্র সম্বল!—আপনারা সুমাতা হউন,—বঙ্গসন্তান, আপনাদেরই সন্তান বলিয়া—জগতে ধন্য হউক! আপনারা তপস্যা ও সাধনার বলে ভগবতী দেবীর ন্যায় আদর্শজননী হউন! আপনাদের অক্ষয় পুণ্যপ্রভাবে বঙ্গের গৃহে গৃহে বিদ্যাসাগর বঙ্গসন্তান রূপে জন্মগ্রহণ করুন!
স মা প্ত