পাতা:বিদ্যাসাগর জননী ভগবতী দেবী.pdf/১১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১০৪
ভগবতী দেবী

সচিত্র [সূচী: ভীম, দ্রোণ, কর্ণ, ভীম, দুর্য্যোধন, গান্ধারী, কুন্তী, দ্রৌপদী, যুধিষ্ঠির, অর্জ্জুন, শ্রীকৃষ্ণ; ২। অমৃতাভ। কলিকাতা, কমলা বুক ডিপো, [জানুয়ারি ১৯১৯], ২+১+২০০ পৃষ্ঠা। [বুদ্ধদেব, যীশুখ্রীষ্ট, হজরত মহম্মদ, চৈতন্যদেব—এই চারজনের জীবনী]; ৩। নিভৃত বিলাপ কাব্য। ১৯১২; ৪। আর্য্যগৌরব; ৫। শিশুরঞ্জন ভারতের ইতিহাস; ৬। শিশুরঞ্জন মহাভারত; ৭। শিশুরঞ্জন রামায়ণ; ৮। বিদ্যাসাগর জননী ভগবতী দেবী। ১৯১২।

গ্রন্থপরিচয়

 প্রিয়দর্শন হালদারের গ্রন্থগুলির মধ্যে ‘বিদ্যাসাগর জননী ভগবতী দেবী’ একটি উলেখযোগ্য গ্রন্থ। গ্রন্থকার সমসাময়িক বিদ্যাসাগর জীবনীর উপকরণের সহায়তায় এই জীবনী লিখেছিলেন। এই গ্রন্থে তিনি মাতা ভগবতীর এক বিশিষ্ট রূপ দিয়েছেন।

 ভগবতী দেবীকে সাক্ষাৎ ভাবে দেখেছিলেন বিদ্যাসাগর-সুহৃদ হ্যারিসন সাহেব। তিনি ফোর্ট উইলিয়ম কলেজে বিদ্যাসাগরের ছাত্র ছিলেন। তিনি নাকি ভগবতী দেবীকে খ্রীঃ পূঃ দুই শতকের প্রবাদ পুরুষ প্রাচীন রোমের রাজনীতিবিদ্ গ্রাকাই ভ্রাতাদের (গেয়াগ ও টাইবেরিয়াস) মহীয়সী জননী কর্ণেলিয়ার সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। মত কর্ণেলিয়া তাঁর পুত্রদ্বয়কে পরম পার্থিব সম্পদ বহমূল্য রত্ন হিসাবে বিবেচনা করতেন। বাঙালী ঘরের মাতা ভগবতী দেবী তাঁর চার ছেলেদের দেখিয়ে বলেছিলেন—‘এই আমার চার ঘড়া ধন।’

 ভগবতী দেবীর ছবি এঁকেছিলেন প্রসিদ্ধ শিল্পী হাডসন সাহেব এবং এই ছবি অদ্যাবধি বিদ্যাসাগর কলেজের অধ্যক্ষের ঘরে রক্ষিত আছে। চণ্ডীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘বিদ্যাসাগর’ (১৮৯৫) গ্রন্থে সর্বপ্রথম এটি মুদ্রিত হয়। ভগবতী দেবীর এই চিত্র প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ তাঁর ‘বিদ্যাসাগর চরিত’ পুস্তিকায় মন্তব্য প্রকাশ করেন ১৩০৩ সালে। এটি পঠিত হয় ১৩০২ সালের ১৩ই শ্রাবণ অপরাহ্ণে এমারেল্ড থিয়েটার রঙ্গমঞ্চে বিদ্যাসাগরের সাৎসরিক স্মারক অধিবেশনে। পরে এটি সাধনা পত্রের ১৩০২ সালে ভাদ্র-কার্তিক সংখ্যায় প্রকাশিত হয়ঃ—

 ‘বঙ্গদেশের সৌভাগ্যক্রমে এই ভগবতীদেবী এক অসামান্যা রমণী ছিলেন। শ্রীযুক্ত চণ্ডীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয়ের রচিত বিদ্যাসাগর-গ্রন্থে লিথোগ্রাফ-পটে এই দেবীমূর্তি প্রকাশিত হইয়াছে। অধিকাংশ প্রতিমূর্তিই অধিকক্ষণ দেখিবার দরকার হয় না; তাহা যেন মুহূর্তকালের মধ্যেই নিঃশেষিত হইয়াও যায়। তাহা নিপুণ হইতে পারে সুন্দর হইতে পারে; তথাপি তাহার মধ্যে চিত্তনিবেশের যথোচিত স্থান পাওয়া যায় না। চিত্রপটের উপরিতলেই দৃষ্টির প্রসর পর্যবসিত হইয়া যায়। কিন্তু ভগবতীদেবীর এই পবিত্র মুখশ্রীর গভীরতা এবং উদারতা বহুক্ষণ নিরীক্ষণ করিয়াও শেষ করা যায় না।’

সনৎকুমার গুপ্ত