অসাধারণ জ্ঞান ও প্রগাঢ় ভক্তি ছিল। ইনি পাতুলগ্রামনিবাসী অদ্বিতীয় পণ্ডিত পঞ্চানন বিদ্যাবাগীশ মহাশয়ের জ্যেষ্ঠা কন্যা গঙ্গামণি দেবীর পাণিগ্রহণ করেন। ইঁহার গর্ভে রামকান্তের লক্ষ্মী ও ভগবতীনাম্নী পরমসুলক্ষণা দুই কন্যা জন্মে। রামকান্ত সংসারসুখসম্ভোগ অকিঞ্চিৎকর বিবেচনা করিয়া সর্ব্বথা বিষয়বাসনা পরিহার করেন, এবং রামজীবনপুরের অতি সন্নিহিত করঞ্জী গ্রামে মাতামহাশ্রয়ে অবস্থিতি করিয়া প্রতি অমাবস্যায় অন্ধকারময়ী ঘোরা রজনীতে নির্জ্জন ভীষণ শ্মশানে নির্ভয়ে একাকী উপবেশন করিয়া জপ করিতেন। ক্রমে শবসাধন করিয়া তিনি সিদ্ধিলাভ করেন। শেষাবস্থায় তিনি মৌনাবলম্বন করিয়াছিলেন, মধ্যে মধ্যে 'মঞ্জুর' এই শব্দটি মাত্র উচ্চারণ করিতেন।
জামাতা শবসাধন করিয়া মৌনাবলম্বন করিয়াছেন, এই সংবাদ শ্রবণ করিয়া পঞ্চানন বিদ্যাবাগীশ মহাশয় করঞ্জী গ্রাম হইতে জামাতা রামকান্ত, দুহিতা গঙ্গামণি ও দৌহিত্রী লক্ষ্মী ও ভগবতীকে পাতুল গ্রামে আনয়ন করেন। ইহার কিছুকাল পরে বিদ্যাবাগীশ মহাশয় মানবলীলা সম্বরণ করেন। তাঁহার জ্যেষ্ঠ পুত্র রাধামোহন বিদ্যাভূষণ একজন সহৃদয়, সদাশয়, ধর্ম্মপরায়ণ, পরোপকারী ও সত্যনিষ্ঠ লোক ছিলেন। আত্মীয় স্বজনের পোষণ, গুণিজনকে উৎসাহদান, সাধুতার সমাদর, বিপন্নের বিপদুদ্ধার, — এই সকল যেন তাঁহার স্বভাবসিদ্ধ কর্ম ছিল। যেখানে সৎসঙ্কল্প, সদনুষ্ঠান, সৎপ্রসঙ্গ, সেখানে তিনি বিদ্যমান থাকিতেন। কায়মনোবাক্যে পরপীড়নপরিবর্জ্জন, সকলের প্রতি অভিন্নপ্রীতি ও প্রিয়চিকীর্ষা, যথাশক্তি দান,—এই শাশ্বতব্রতে বাল্যকাল হইতেই তিনি দীক্ষিত ছিলেন। স্বাভাবিক ধৈর্য্য, সহিষ্ণুতা, কর্ত্তব্যনিষ্ঠা ও ঈশ্বরে একান্ত অনুরাগ প্রভৃতি গুণে তিনি বিভিন্নপ্রকৃতি লোকদিগকে লইয়া বহুতর লোকহিতকর কার্য্য করিয়াছিলেন। পিতার অবিদ্যমানতায় অন্যান্য সহোদর ও সহোদরা এবং তাঁহাদের সন্তানগণের লালন পালনের ভার গ্রহণ করিয়া পিতার সুনাম রক্ষার জন্য এক্ষণে তিনি যত্নবান্ হইলেন। তখন হিন্দুর একান্নবর্ত্তী পরিবারস্থ সকলে কিরূপ সুখস্বাচ্ছন্দ্যে দিনযাপন করিতেন, তাহার দৃষ্টান্ত এদেশে বিরল ছিল না। তখন লোকে অর্থোপার্জ্জন করিয়া তাহার সদ্ব্যয় করিতে জানিতেন। স্বীয় পুত্র, কন্যা ও পরিবারবর্গকেই সুখী করিয়া তাঁহারা ক্ষান্ত থাকিতেন না। আত্মীয় স্বজনের সেবা, জ্ঞাতিবর্গের যথাশক্তি সাহায্য, মৃত আত্মীয় স্বজনের অনাথ ও নিরাশ্রয় পুত্রকন্যাগণের ভরণপোষণ, ধর্ম্মালোচনা, দোল, দুর্গোৎসব প্রভৃতি বারমাসে তের পার্ব্বণ, ব্রাহ্মণ ভিক্ষুককে দান, স্বীয় ভবনে শাস্ত্রকথা, কথকতা ইত্যাদির ব্যবস্থাবিধান প্রভৃতি নিষ্ঠাবান্ হিন্দুগৃহস্থোচিত কার্য্য ছিল। এবং ইহাতেই তাঁহারা আত্মপ্রসাদ লাভ করিতেন। অপর দিকে গুরুজনের প্রতি ভক্তি ও বাধ্যতা ছিল; গৃহস্বামীকে সকলে দেবতার ন্যায় ভক্তি ও সম্মান করিতেন, সংসারের মধ্যে কেহ উপার্জ্জনে অপারগ হইলে, তিনি শারীরিক পরিশ্রম দ্বারা সংসারের কল্যাণসাধনে যত্নবান্ হইতেন এবং গৃহ-