ছিলেন। ভগবান্ মহম্মদ একচ্ছত্র সম্রাট হইয়াও আপনাকে কূপজলোত্তলনরূপ দাস্যকর্ম্মে নিয়োজিত করিয়া পরিবার প্রতিপালন করিয়াছিলেন। ভগবান বুদ্ধ মহারাজচক্রবর্ত্তী হইয়াও দীনহীন সন্ন্যাসীর বেশ ধারণ করিয়া জগতের পূজ্য হইয়াছিলেন। ভগবান শ্রীচৈতন্যদেবের দীনতা ও অভিমানশূন্যতা আজিও আবঙ্গ-উৎকলে বিঘোষিত হইতেছে।
দীনতা ভক্তিসাধনার প্রধান অঙ্গ; অথবা দীনতা ভক্তিসাধনার পরিপক্ক ফল। দীন ভক্ত যে ঈশ্বরানুগৃহীত, তাহার পর্য্যাপ্ত প্রমাণ এই যে, জীবমাত্রই তাঁহার প্রতি প্রগাঢ় প্রেম প্রকাশ করে। দীন ভৃত্যের পদচালনে পথিবী পবিত্রা হয়, সাধারণ স্থল মহাতীর্থে পরিণত হয়, তাঁহার সঙ্গিগণ নবজীবন প্রাপ্ত হয়। বায়ুমণ্ডলের কুভাব-তরঙ্গ প্রশমিত করিয়া তিনি শান্তির মৃদুমন্দ সমীরণ প্রবাহিত করেন। তাঁহার চিত্তাকর্ষক চরিত্রে জীবমাত্রই বশীভূত হইয়া পড়ে। তাঁহার সকলের প্রতি সমদৃষ্টিতে, তাঁহার চরিত্রের মধুরতায়, তাঁহার মিষ্টবাক্যে ও বিনয়নম্র দৃষ্টিতে কুপথগামী জনগণ নবজীবন প্রাপ্ত হইয়া থাকে।
ভগবতী দেবীর বাল্যজীবনে তেজস্বিতারও বিশেষ পরিচয় পাওয়া যায়। দীনতার সহিত তেজস্বিতার সম্মিলন মণিকাঞ্চনসংযোগবৎ তাঁহার বালিকা-হৃদয়ে পরম রমণীয় ভাব ধারণ করিয়াছিল। তাঁহার মাতুলালয়ের সন্নিকটে যে সকল দরিদ্র তেওর ও বাগ্দীরা বাস করিত, তাহাদিগকে মধ্যে মধ্যে তিনি তণ্ডুলাদি আহার্য্য দ্রব্য এবং বস্ত্রাদি বিতরণ করিতেন। পাছে, ইহা দেখিয়া পরিবারবর্গের মধ্যে কেহ অসন্তুষ্ট হন, এই ভয়ে তাঁহার মাতা এক সময়ে তাঁহাকে নিষেধ করিয়াছিলেন। তদুত্তরে ভগবতী দেবী বলিলেন, “মামা কখন ইহাতে রাগ করিবেন না। যদি রাগ করেন, তাঁহাকে একটি চরকা নির্ম্মাণ করিয়া দিতে বলিব। সেই চরকায় সূতা কাটিব এবং সূতা বিক্রয় করিয়া যে পয়সা পাইব, তদ্দ্বারা তণ্ডুল ও বস্ত্রাদি ক্রয় করিয়া উহাদিগকে বিতরণ করিব”। ক্রমে এই কথা রাধামোহন বিদ্যাভূষণ মহাশয়ের কর্ণগোচর হয়। তিনি এই কথা শুনিয়া পরম আনন্দিত হইলেন। তিনি তাঁহার এই বালিকা ভাগিনেয়ীর কার্য্যকলাপে কি যেন এক স্বর্গীয় ভাব দেখিতে পাইতেন। তিনি এই কথা শুনিয়া ভগবতী দেবীকে ক্রোড়ে করিয়া মুখচুম্বন করিতে করিতে বলিতে লাগিলেন —“মা, আমার সাক্ষাৎ অন্নপূর্ণা। মা তোমার যত ইচ্ছা তুমি গরিবকে দান করিও। যদি তোমাকে কেহ কিছু বলে, তুমি বলিও এ দান তোমাদের জন্য তোলা রহিল। গরিবকে এক গুণ দিলে ভগবান দশ গুণ দিবেন। গরিবকে দান করলে কি কখন অপব্যয় করা হয়?” শাস্ত্রে আছ,—
“দাতব্যমিতি বন্দানং দীয়তেহনুপকারিণে।
দেশে কালে চ পাত্রে তদ্দানং সাত্ত্বিকং স্মৃতম্।”
দান করিতে হইবে, ইহা মনে করিয়া দেশকালপাত্র বিবেচনায়, অপকারীকেও যে দান