পাতা:বিদ্যাসাগর জননী ভগবতী দেবী.pdf/২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১২
ভগবতী দেবী

 এই সময়ে, মোটামুটি ইঙ্গরেজী জানিলে, সওদাগর সাহেবদিগের হৌসে, অনায়াসে কর্ম্ম হইত। এজন্য, সংস্কৃত না পড়িয়া, ইঙ্গরেজী পড়াই, তাঁহার পক্ষে পরামর্শসিদ্ধ স্থির হইল। কিন্তু, সে সময়ে ইঙ্গরেজী পড়া সহজ বাপার ছিল না। তখন, এখনকার মত, প্রতি পল্লীতে ইঙ্গরেজী বিদ্যালয় ছিল না। তাদৃশ বিদ্যালয় থাকিলেও, তাঁহার ন্যায় নিরুপায় দীন বালকের তথায় অধ্যয়নের সুবিধা ঘটিত না। ন্যায়ালঙ্কার মহাশয়ের পরিচিত এক ব্যক্তি কার্য্যোপযোগী ইঙ্গরেজী জানিতেন। তাঁহার অনুরোধে, ঐ ব্যক্তি ঠাকুরদাসকে ইঙ্গরেজী পড়াইতে সম্মত হইলেন। তিনি বিষয়কর্ম্ম করিতেন; সুতরাং দিবাভাগে, তাঁহার পড়াইবার অবকাশ ছিল না। এজন্য, তিনি ঠাকুরদাসকে সন্ধ্যার সময়, তাঁহার নিকট যাইতে বলিয়া দিলেন। তদনুসারে, ঠাকুরদাস প্রত্যহ সন্ধ্যার পর তাঁহার নিকটে গিয়া ইঙ্গরেজী পড়িতে আরম্ভ করিলেন।

 “ন্যায়ালঙ্কার মহাশয়ের বাটীতে, সন্ধ্যার পরেই, উপরিলোকের আহারের কাণ্ড শেষ হইয়া যাইত। ঠাকুরদাস, ইঙ্গরেজী পড়ার অনুরোধে, সে সময় উপস্থিত থাকিতে পারিতেন না;.... এইরূপে নক্তন্তন আহারে বঞ্চিত হইয়া তিনি দিন দিন শীণ ও দুর্ব্বল হইতে লাগিলেন।” পরিশেষে তাঁহার শিক্ষকের পরামর্শানুসারে তাঁহার আশ্রয় গ্রহণ করিলেন। এই সদাশয় দয়ালু মহাশয়ের দয়া ও সৌজন্য যেরূপ ছিল, আয় সেরূপ ছিল না। কোনও কোনও দিন কার্য্যবশতঃ তিনি দিবাভাগে বাসায় আসিতে পারিতেন না। সেই সেই দিন, ঠাকুরদাসকে সমস্ত দিন উপবাসী থাকিতে হইত।

 “কিছুদিন পরে, ঠাকুরদাস আশ্রয়দাতার সহায়তায়, মাসিক দুই টাকা বেতনে, কোনও স্থানে নিযুক্ত হইলেন। এই কর্ম্ম পাইয়া, তাঁহার আর আহ্লাদের সীমা রহিল না। পূর্ব্ববৎ আশ্রয়দাতার আশ্রয়ে থাকিয়া, আহারের ক্লেশ সহ্য করিয়াও বেতনের দুইটি টাকা, যথা নিয়মে জননীর নিকট পাঠাইতে লাগিলেন। তিনি বিলক্ষণ বুদ্ধিমান ও যারপরনাই পরিশ্রমী ছিলেন, এবং কখনও কোনও ওজর না করিয়া সকল কর্ম্মই সুন্দররূপে সম্পন্ন করিতেন; এজন্য, ঠাকুরদাস যখন যাঁহার নিকট কর্ম্ম করিতেন, তাঁহারা সকলেই তাঁহার উপর সাতিশয় সন্তুষ্ট হইতেন।

 “দুই তিন বৎসরের পরেই, ঠাকুরদাস মাসিক পাঁচ টাকা বেতন পাইতে লাগিলেন। তখন তাঁহার জননীর ও ভাইভগিনীগুলির, অপেক্ষাকৃত অনেক অংশে, কষ্ট দূর হইল।”

 এদিকে রামজয় তীর্থস্থানে থাকিয়া স্বপ্ন দেখেন যে, তুমি পরিবারবর্গকে কষ্ট দিয়া তীর্থক্ষেত্রে ভ্রমণ করিতেছ, ইহাতে তোমার অধর্ম্ম হইতেছে। একারণ পাঁচ বৎসরের পরে দেশে আগমনপূর্ব্বক বনমালিপুরে আসিয়া দেখিলেন যে, সহোদরেরা পৃথক হইয়াছেন এবং শুনিলেন যে, তাঁহার পত্নী বীরসিংহের পিত্রালয়ে অবস্থিতি করিতেছেন। সতরাং রামজয় পরিবারবর্গকে আনয়ন করিবার জন্য