পাতা:বিদ্যাসাগর জননী ভগবতী দেবী.pdf/৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২২
ভগবতী দেবী

এ সংবাদ কলিকাতায় পুত্রদ্বয়ের নিকট প্রেরিত হইল। সংবাদ প্রাপ্তিমাত্রেই বহুকালের পর পিতৃপদ সন্দর্শনার্থে ঠাকুরদাস ও কালিদাস কলিকাতা হইতে বীরসিংহে আগমন করিলেন।

 ১৭৪২ শকান্দা অর্থাৎ সন ১২২৭ সালের ১২ই আশ্বিন মঙ্গলবার দিবা দ্বিপ্রহরের সময় বীরশিশু ঈশ্বরচন্দ্র বীরসিংহ ক্ষুদ্র পল্লীতে দরিদ্র ঠাকুরদাসের পর্ণকুটীরে ভূমিষ্ঠ হইলেন। সূতিকাগৃহের দ্বারে সমাগত পল্লীবাসিনীগণের মাঙ্গল্য শঙ্খধ্বনি ও হুলুধ্বনিতে ক্ষুদ্র পল্লীখানি কম্পান্বিত হইল। বার্ত্তাবহ সমীরণ প্রতিধ্বনি বহন করিয়া দ্বারে দ্বারে মহাপুরুষের জন্মবার্ত্তা বিঘোষিত করিলেন। একপ্রকার মাঙ্গল্য অভ্যর্থনার মধ্যে ঈশ্বরচন্দ্র প্রথম সূর্য্যের আলোক দেখিলেন। তীর্থক্ষেত্র হইতে সমাগত পিতামহ রামজয় বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয়, নাড়ীচ্ছেদনের পুব্বে আল্‌তার দ্বারা ভূমিষ্ঠ বালকের জিহ্বার নিম্নে কয়েকটি কথা লিখিয়া, তাঁহার পত্নী দুর্গাদেবীকে বলিলেন,—“লেখার নিমিত্ত শিশুটি কিয়ৎক্ষণ মাতৃদুগ্ধ পান করিতে পায় নাই; বিশেষতঃ কোমল জিহ্বায় আমার কঠোর হস্ত দেওয়ায়, এই বালক কিছুদিন তোত্‌লা হইবে। এই বালক ক্ষণজন্মা, অদ্বিতীয় পুরষ ও পরম দয়ালু হইবে এবং ইহার কীর্ত্তি দিগন্তব্যাপিনী হইবে। এই বালক জন্মগ্রহণ করায়, আমার বংশের চিরস্থায়ী কীর্ত্তি থাকিবে। ইহাকে দেখিয়া আমি চরিতার্থ হইলাম। এই বালককে অপর কেহ যেন মন্ত্র না দেয়; অদ্য হইতে আমিই ইহার অভীষ্টদেব হইলাম। এ বালক সাক্ষাৎ ঈশ্বরতুল্য; অতএব ইহার নাম অদ্য হইতে আমি ঈশ্বর রাখিলাম।”

 আজ রামজয় তীর্থক্ষেত্রের সেই স্বপ্নকে সত্য জ্ঞান করিলেন। বিদ্যাসাগর মহাশয় ভূমিষ্ঠ হইয়া সূতিকাগৃহে পিতামহ কর্তৃক যে নামে অভিহিত হইয়াছিলেন, সেই ‘ঈশ্বরচন্দ্র’ নামেই তিনি উত্তরকালে জনসমাজে পরিচিত হইয়াছেন। ঈশ্বরচন্দ্র যৎকালে গর্ভে ছিলেন, তৎকালে জননী ভগবতী দেবী দশ মাস উন্মত্তার ন্যায় ছিলেন। দুর্গাদেবী বধূর রোগাপনয়নের জন্য কতই প্রতিকার করিয়াছিলেন, কিন্তু কিছুতেই উপশম হয় নাই। তৎকালে কোন কোন বন্ধ দুর্গাদেবীকে বলিতেন, তোমার বধূমাতাকে ভূতে পাইয়াছে; আবার কেহ কেহ বলিতেন, ডাইনী পাইয়াছে। এই সকলের রোজা আনাইয়া দেখান হয়, কিন্তু কিছুতেই উপশম হয় নাই। অবশেষে উদয়গঞ্জনিবাসী পণ্ডিতপ্রবর ভবানন্দ শিরোমণি ভট্টাচার্য্য মহাশয়কে দেখান হয়। তিনি ঐ প্রদেশের মধ্যে চিকিৎসা ও গণিতশাস্ত্রে পারদর্শী ছিলেন। রোগের তথ্যানুসন্ধানবিষয়ে তাঁহার বিশিষ্টরূপ ক্ষমতা ছিল। ইনি রোগনির্ণয়ের পূর্ব্বে রোগীর কোষ্ঠী গণনা করিতেন। ইনি দুর্গাদেবীকে বলিলেন, “আপনার বধূমাতার আমি রোগ নির্ণয় করিলাম, এক্ষণে ইঁহার কোষ্ঠী দেখিতে ইচ্ছা করি।” চিকিৎসক ভট্টাচার্য্য মহাশয় উক্তরূপ কথা বলিলে, দুর্গাদেবী তাঁহার কোষ্ঠী দেখিতে দিলেন। কিয়ৎক্ষণ পরে ভবানন্দ