উচ্চ গ্রহসকল প্রত্যক্ষ পরিদৃশ্যমান হইতেছে, এরপ ফল কাহারও কোষ্ঠীতে অদ্যাপি দেখিতে পাই নাই। এ বালক জগদ্বিখ্যাত নৃপতুল্য ও দয়াময় হইবে, এবং দীর্ঘায়ু হইয়া নিরন্তর ধন ও বিদ্যাদান করিয়া, সাধারণের দুঃখনিবারণ করিবে।”
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যশালিনী, জ্ঞান-ভক্তি-প্রসবিনী ভূকৈলাস ভারতভূমি পুণ্যের লীলাক্ষেত্র। এই পুণ্যক্ষেত্রে কত মহাত্মাই জন্মগ্রহণ করিয়া দেশকে পবিত্র করিয়াছেন, কত অমূল্য সত্যরত্ন দান করিয়া দেশকে সমৃদ্ধিশালী করিয়াছেন, তাহার ইয়ত্তা নাই। এই সেই পুণ্যভূমি ভারতভূমি, যেখানে পুণ্যতোয়া ভাগীরথী, সরস্বতী, দৃষদ্বতী, নর্ম্মদা, সিন্ধু, কাবেরী প্রভৃতি স্রোতস্বিনীগণ প্রবাহিত হইয়া দেশকে পবিত্র করিতেছে। এই সেই পুণ্যভূমি ভারতভূমি, যেখানে আর্য্যকুলতিলক ঋষিগণ মনোহর আশ্রমে উপবেশন করিয়া সমতানে সমস্বরে সেই আদিদেবের স্তুতিবাদ করিতেন, আর সামগানে তাঁহার মহিমা কীর্ত্তন করিতেন। এই সেই দেবলোক ভারতভূমি, যেস্থানের নৈমিষারণ্যে শ্বেতশ্মশ্রুধারী, দীর্ঘকায়, তেজঃপুঞ্জ, শুদ্ধচেতা মুনিগণ ভগবদ্ভক্তিরস পান করিতে করিতে ভক্তিতত্ত্ব ব্যাখ্যা ও শ্রবণ করিতেন। এই সেই দেবলোক ভারতভূমি, যেখানে ধ্যানস্তিমিতলোচন সমাধিস্থ যোগিগণ একান্তমনে পর্ব্বতকন্দরে বা সরযূতটে ব্রহ্মধ্যানে মগ্ন হইয়া চিদানন্দ পুরষের দর্শনে অপার যোগানন্দ সম্ভোগ করিতেন; এই সেই পুণ্যের লীলাক্ষেত্র ভারতভূমি, যেখানে বুদ্ধ, শ্রীচৈতন্য, নানক আবির্ভূত হইয়া পতিত নরনারীর উদ্ধারসাধন করিয়াছিলেন। এই সেই পুণ্যের লীলাক্ষেত্র ভারতভূমি যেখানে কুমারিলভট্ট, শঙ্করাচার্য্য, কবীর, রামানুজ, রামমোহন প্রভৃতি মহাপুরুষগণ জন্মগ্রহণ করিয়া স্ব স্ব ধর্ম্মমত প্রচার করিয়াছেন। ভারতভাগ্য চিরদিনই এইরূপ বিধাতার অযাচিত অনুকম্পালাভে সুপ্রসন্ন।
বিধাতার রাজ্যে একাদিক্রমে অন্যায় অতাচার অধিকদিন রাজত্ব করতে পারে না। মানবজীবন ধারাবাহিকরূপে অধিক দিন অশেষ ক্লেশ সহ্য করিতে পারে না। জনসমাজ দুরাচারী পাপ-ভারাক্রান্ত লোকদিগকে বহন করিয়া অধিক দিন যন্ত্রণাভোগ করিতে অসমর্থ। যিনি ত্রিভুবনপালক বিশ্বনিয়ন্তা, তিনি নিয়ত জাগ্রত থাকিয়া এই মানবজীবনের পরিচালক হইয়া স্থিতি করিতেছেন। তিনি মানবমণ্ডলীর আধ্যাত্মিক গতি ও লক্ষ্য নির্দ্দিষ্ট করিয়া যুগে যুগে নানা প্রকার লীলা প্রদর্শন করিতেছেন। সেই জন্য দেখিতে পাই ধর্ম্মবিপ্লব, সমাজবিপ্লব, সমাজসংস্কার ও সামাজিক পরিবর্ত্তনের সময়ে অবনীমণ্ডলে এক একজন মহাপুরুষের আবির্ভাব হয়। মহাত্মা রামমোহন, ডেভিড হেয়ার, রামকমল, রাধাকান্ত যে কর্ম্মক্ষেত্র প্রস্তুত করিয়াছিলেন, সেই কর্ম্মক্ষেত্রে কার্য্য করিবার জন্য অলৌকিক পৌরুষ ও প্রতিভাশালী, অসাধারণ অধ্যবসায়ী ও সহিষ্ণু, দয়া ও প্রেমের অবতার, এক বিরাট মহাপুরুষের আবির্ভাবের সময় উপস্থিত হইয়াছিল। সেইজন্য,