পাতা:বিদ্যাসাগর জননী ভগবতী দেবী.pdf/৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শিশুচর্য্যা ও সন্তানশিক্ষা
৩৩

 ভগবতী দেবী সন্তানদিগকে কখন ‘জুজুর ভয় দেখান, কিম্বা তাহাদিগকে শান্ত করিবার মানসে ‘আকাশের চাঁদ’ ধরিয়া দিবার কথা বলিতেন না। তিনি এরূপ ক্ষেত্রে সন্তানের যতদূর সম্ভব প্রার্থনা রক্ষা করিতেন এবং স্নেহ ও মমতার দ্বারা পরিচালিত হইয়া তাহাদিগকে শান্ত করিতেন। কঠোর শাসন দ্বারা তাহাদিগের কোমল বৃত্তিগুলির মূলে আঘাত করিতে তিনি কখনই প্রয়াস পাইতেন না। ইহা তাঁঁহার একেবারেই প্রকৃতিবিরুদ্ধে ছিল। অবস্থায় যাহা সঙ্কুলান হয়, তাহার অতিরিক্ত প্রার্থনা করিলে, সংসারের দরিদ্র অবস্থা স্মরণ করাইয়া এবং বুঝাইয়া দিয়া তাহাদিগকে নিরত করিতেন।

 সৎকার্য্যে উৎসাহ দান, তাঁহার চরিত্রের আর এক বিশেষত্ব। শিশু সন্তানদিগের দ্বারা অনুষ্ঠিত সৎকার্য্য ও সদ্ব্যবহার দেখিলে, তিনি আনন্দ প্রকাশ করিতেন এবং উৎসাহ দিতেন। একদা বালক বিদ্যাসাগর সমবয়স্ক বালকদিগের সহিত ক্রীড়া

    প্রবৃত্ত হইয়া গুর বা লঘু ব্যক্তির সহিত বিবাদ করিবে না; বিদ্যা, ধন, যশ ও ধর্ম্ম যত্নপূর্ধ্বক উপার্জ্জন করিবে, এবং ব্যসন, কুসংসর্গ, মিথ্যাবচন, পরদ্রোহ প্রভৃতি সর্ব্বতোভাবে পরিত্যাগ করিবে। চেষ্টা অবস্থার অনুগত এবং ক্রিয়া সময়ের অনুগত; অতএব অবস্থা ও সময় অনুসারেই কর্ম্মানুষ্ঠান করিবে।
     গৃহীরা যোগক্ষেমে নিরত থাকিবে; দক্ষ ও ধার্ম্মিক হইবে; বন্ধধুুগণের প্রতি সৌহার্দ্দ প্রদর্শন করিবে; (সর্ব্বজন সমক্ষে) বিশেষতঃ মাননীয় জনসমূূহের নিকট পরিমিতভাষী হইবে; তাঁহাদের নিকট অপরিমিত হাস্যও করিবে না। গৃৃহস্থগণ জিতেন্দ্রিয়, প্রসন্নচিত্ত, দৃৃঢ়ব্রত, অপ্রমত্ত ও দীর্ঘদর্শী হইবে; অসৎ বিষয় চিন্তা না করিয়া কেবল সবিষয়েরই আলোচনা করিবে; ইন্দ্রিয়বৃত্তি বিষয় অথাৎ ভোগ বস্তু সমুদায় বিচার না করিয়া ভোগ করিবে না। ধীর ব্যক্তি সতত সত্য, মদ, প্রিয় ও হিতকর বাকা প্রয়োগ করিবে এবং কদাপি আত্মশ্লাঘা ও পরনিন্দা করিবে না।
     যে ব্যক্তি জলাশয় খনন, বক্ষরোপণ, পথিমধ্যে বিশ্রামগহ নির্ম্মাণ ও সেতু নির্ম্মাণ করিয়া সাধারণের ব্যবহারের উদ্দেশে প্রতিষ্ঠা ও উৎসর্গ করে, সেই ব্যক্তিই (পুণ্যফলে) ত্রিভুবন জয় করিতে পারে। মাতাপিতা যাহার প্রতি সন্তুষ্ট, সুহৃদগণ যাহাতে অনুরক্ত, মানবগণ যাহার যশোগান করিয়া থাকে, সেই ব্যক্তিই (পুণ্যফলে) ত্রিভুবন জয় করে। সত্যই যাহার সনাতন ব্রত, যে ব্যক্তি সর্ব্বতোভাবে দীন দরিদ্রের প্রতি দয়া প্রদর্শন করে, কাম ও ক্রোধ যাহার বশীভূত, সেই ব্যক্তিই (পুণ্যফলে) ত্রিভুবন জয় করিয়া থাকে। যে ব্যক্তি * * * ও পরদ্রব্যে নিস্পৃৃহ, যে ব্যক্তি দম্ভ ও মাৎসর্য্যবিহীন, সেই ব্যক্তিই (পুণ্যফলে) ত্রিভুবন জয় করিয়া থাকে। যে ব্যক্তি রণে ভীত হয় না, সমরেও পরাঙ্খুুখ হয় না, অথবা যে ব্যক্তি ধর্ম্মযুদ্ধে দেহ পরিত্যাগ করে, সেই ব্যক্তিই (পুণ্যফলে) ত্রিভুবন জয় করিতে পারে। যাহার আত্মা সন্দিগ্ধ নহে, অথচ যে ব্যক্তি শ্রদ্ধাযুক্ত ও শৈবাচারে নিরত থাকিয়া মদীয় শাসনের বশবত্তী হয়, সেই ব্যক্তিই (পণ্যফলে ত্রিভুবন জয় করে। যে ব্যক্তি তত্তজ্ঞানসম্পন্ন হইয়া কি শহু, কি মিত্র সকলের প্রতি সমদৃষ্টি রাখিয়া কেবল লোকযাত্রা নির্ব্বাহের নিমিত্ত কর্ম্মানুষ্ঠান করে, সেই ব্যক্তিই (পুণ্যফলে) ত্রিভুবন জয় করিতে পারে।

    মহানিব্বণিতনন্ত্রম্-অষ্টম উল্লাসঃ।