পাতা:বিদ্যাসাগর জননী ভগবতী দেবী.pdf/৪৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিদ্যাসাগরের বিদ্যাশিক্ষা
৩৯

দিতেন। গুরুমহাশয় একদিবস সন্ধ্যার সময় ঠাকুরদাসকে বলিলেন, “মহাশয়, আপনার পুত্র অদ্বিতীয় বুদ্ধিমান্‌, শ্রুতিধর বলিলেও অত্যুক্তি হয় না। পাঠশালায় যাহা শিখিতে হয়, তৎসমুদায়ই ইহার শিক্ষা হইয়াছে। ঈশ্বরকে এখান হইতে কলিকাতায় লইয়া যাওয়া অত্যন্ত আবশ্যক হইয়াছে। আপনি নিকটে রাখিয়া ইংরাজী শিক্ষা দিলে ভাল হয়। এ ছেলে সামান্য ছেলে নয়, বড় বড় ছেলেদের অপেক্ষা ইহার শিক্ষা অতি উত্তম হইয়াছে। আর হস্তাক্ষর যেরূপ হইয়াছে, তাহাতে পুঁথি লিখিতে পারিবে।” বিদ্যাসাগরের কলিকাতায় যাইবার প্রস্তাব শুনিয়া ভগবতী দেবী উচ্চৈঃস্বরে রোদন করিতে লাগিলেন।

 ঠাকুরদাস ইং ১৮২৯ ও বাঙ্গালা ১২৩৫ সালের কার্ত্তিক মাসে গুরুমহাশয় কালীকান্ত চট্টোপাধ্যায়কে সমভিব্যাহারে লইয়া, কলিকাতা যাত্রা করিলেন। কলিকাতা, বীরসিংহ হইতে প্রায় ২৬ ক্রোশ উত্তর পূর্ব্বে। তৎকালে তথা হইতে কলিকাতায় আসিবার সুগম পথ ছিল না। বিশেষতঃ পথে অত্যন্ত দস্যুর ভয় ছিল। প্রায় মধ্যে মধ্যে অনেকেই দস্যুযদিগের হস্তে পতিত হইয়া প্রাণ হারাইত। বিশেষ সতর্কতা অবলম্বনপূর্ব্বক আসিতে হইত। ঘাটাল হইয়া রূপনারায়ণ নদী দিয়া, জলপথে নৌকারোহণে কলিকাতা যাইবার উপায় ছিল বটে, কিন্তু দস্যুভয় প্রযুক্ত নৌকায় যাইতে কেহ সাধ্যমতে ইচ্ছা করিত না। সুতরাং পদব্রজেই আসিতে হইল। বিদ্যাসাগর সমস্ত পথ চলিতে পারিবেন না বলিয়া, ভৃত্য আনন্দরাম গুটিকে ঠাকুরদাস সমভিব্যাহারে লইয়াছিলেন। যখন বিদ্যাসাগর চলিতে অক্ষম হইবেন, তখন মধ্যে মধ্যে এই বাহক, ক্রোড়ে বা স্কন্ধে করিয়া লইয়া যাইবেক ইহাই তাঁহার মন্তব্য ছিল। প্রথম দিবস বাটী হইতে ৬ ক্রোশ অন্তর পাতুল গ্রামে রাধামোহন বিদ্যাভূষণের বাটীতে উপস্থিত হইলেন। পরদিবস সমস্ত দিনের পর সন্ধ্যার সময়, তথা হইতে ১০ ক্রোশ অন্তর সন্ধিপুর গ্রামে রাজচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বাটীতে আগমন করিলেন। পরদিবস প্রাতে শ্যাখালা গ্রামের প্রান্তভাগে যে বাঁধা রাজপথ শালিকা পর্য্যন্ত গিয়াছে, সেই পথ দিয়া গমনকালে বিদ্যাসাগর মহাশয় পথে মাইল-ষ্টোন দেখিয়া বলিলেন, “বাবা! হলুদ বাটিবার শিল এখানে কেন মাটিতে পোতা রহিয়াছে। আর ইহাতে কি লেখা আছে?” তদুত্তরে ঠাকুরদাস বলিলেন, “ইহাকে মাইল-ষ্টোন বলে। ইহাতে ইংরাজী ভাষার নম্বর লেখা আছে। এক মাইল (বাঙ্গালা অর্দ্ধ ক্রোশ) অন্তর এক একটি এইরূপ পাথর পোতা আছে।” শ্যাখালা হইতে শালিকার ঘাট পর্য্যন্ত এইরূপ মাইল-ষ্টোনে ইংরাজী অঙ্ক দেখিয়া বিদ্যাসাগর মহাশয় ১ এক সংখ্যা হইতে ১০ পর্য্যন্ত চিনিলেন। কালীকান্ত চট্টোপাধ্যায় ও ঠাকুরদাস মধ্যে জগদীশপুরে যে স্থানে মাইল-স্টোন ছিল, সেই স্থান দেখান নাই। ইহার কারণ বিদ্যাসাগর অক্ষর চিনিতে পারিয়াছেন কি না, জানিবার অভিপ্রায়ে উভয়ে যুক্তি করিয়াছিলেন। বিদ্যাসাগর বলিলেন, “ইহার পূর্ব্বে তবে একটা পাথর আমরা দেখিতে বিস্মৃত