পাতা:বিদ্যাসাগর জননী ভগবতী দেবী.pdf/৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪০
ভগবতী দেবী

হইয়াছি।” তখন কালীকান্ত বলিলেন, “ঈশ্বর, তুমি ইংরাজী সংখ্যা চিনিয়াছ কি না জানিবার জন্য আমরা ঐরূপ করিয়াছি। তুমি যে বলিতে পারিলে, তাহাতে আমরা পরম আহ্লাদিত হইলাম।” শ্যাখালা গ্রাম হইতে শালিকার গঙ্গার ঘাট ১০ক্রোশ। সন্ধ্যার সময় তথায় সকলে উপস্থিত হইলেন, এবং গঙ্গাপার হইয়া বড়বাজারে বাবু জগদ্দুর্লভ সিংহের বাটীতে আগমন করিলেন। পরদিন প্রাতে ঠাকুরদাস, জগদ্দুর্লভ বাবুর এক ইংরাজী বিল ঠিক দিতেছিলেন; তথায় বিদ্যাসাগর মহাশয়ও উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলিলেন, “বাবা, আমি ইহা ঠিক দিতে পারি।” তাহা শুনিয়া উক্ত সিংহ বলিলেন-“ঈশ্বর, তুমি ইংরাজী অক্ষর কিরূপ করিয়া জানিলে?” তাহাতে তিনি বলিলেন, “কেন, বাবা ও কালীকান্ত খুড়া শ্যাখালা হইতে শালিকার ঘাট পর্য্যন্ত পাথরে অঙ্কিত মাইল-ষ্টোন আমাকে দেখাইয়াছিলেন। তাহাতেই ইংরাজী অঙ্কের ১ সংখ্যা হইতে ১০ সংখ্যা পর্য্যন্ত শিখিয়াছি। সেইজন্য ঠিক দিতে পারিব সাহস করিয়াছি।” উক্ত সিংহ কয়েকটা বিল ঠিক দিবার জন্য বিদ্যাসাগকে দিলেন। এই বিলে তাঁহার ঠিক দেওয়া নির্ভুল হইল দেখিয়া, কালীকান্ত চট্টোপাধ্যায় বিদ্যাসাগরকে ক্রোড়ে করিয়া মুখচুম্বন পূর্ব্বক বলিলেন, “তুমি চিরজীবী হও। আমি যে আন্তরিক যত্নের সহিত পরিশ্রম করিয়া তোমাকে শিক্ষা দিয়াছিলাম, তাহা অদ্য আমার সার্থক হইল।” উপস্থিত সকলে বলিলেন, “বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয়, আপনার এই বুদ্ধিমান্‌ পুত্রটিকে ভালরূপ লেখাপড়া শিক্ষা দেওয়া আবশ্যক।” তাহাতে ঠাকুরদাস বলিলেন, “ইহাকে হিন্দু কলেজে পড়িতে দিব মনে মনে স্থির করিয়াছি।” ইহা শুনিয়া উপস্থিত সকলে বলিলেন, “আপনি মাসিক দশটাকা বেতন পাইয়া থাকেন, তাহাতে হিন্দু কলেজে কেমন করিয়া পুত্রকে অধ্যয়ন করাইবেন?” এই কথা শুনিয়া, তিনি উত্তর করিলেন, “ছেলের কলেজের মাসিক বেতন ৫ টাকা দিব, আর বাটীর খরচ ৫ টাকা পাঠাইব।” ইহার কিছুদিন পরে, জগদ্দুর্লভ বাবুর বাটীর সন্নিহিত বাবু শিবচন্দ্র মল্লিকের বাটীতে যে পাঠশালা ছিল, তথায় রামলোচন সরকারের নিকট শিক্ষা করিবার জন্য তিনি বিদ্যাসাগরকে পাঠাইয়া দেন। বিদ্যাসাগর কার্ত্তিক অগ্রহায়ণ দুই মাস তাঁহার নিকট লেখাপড়া শিক্ষা করেন। তিনি প্রত্যহ ঠাকুরদাসকে বলিতেন, “বীরসিংহের কালীকান্ত খুড়ার পাঠশালে যেরূপ উপদেশ ও শিক্ষা পাইয়াছি, তদপেক্ষা ইঁহার নিকট অতিরিক্ত কিছুই শিক্ষা করিবার আশা নাই।” ইহার কয়েক দিন পরে, বিদ্যাসাগর উদরাময়ে আক্রান্ত হইয়া, সর্ব্বদা অসাবধান অবস্থায় শয্যায় মলমূত্র ত্যাগ করিতে লাগিলেন। অন্য কেহ অভিভাবক না থাকায়, ঠাকুরদাসকেই ঐ বিষ্ঠা স্বহস্তে পরিষ্কার করিতে হইত। এক একদিন এরূপ হইত যে, সিঁড়িতে মলত্যাগ করিলে, সমস্ত সিঁড়িতে তরল মল গড়াইয়া পড়িত। ঠাকুরদাস স্বহস্তে ঐ বিষ্ঠা পরিষ্কার করিতেন। এই সংবাদ বীরসিংহে প্রেরিত হইলে, ভগবতী দেবী কাঁদিয়া আকুল হইলেন,