শীল লোক পারিবারিক বন্ধনের অটল স্তম্ভ। ক্ষমাশীল লোকদ্বারা যে পরিবার গঠিত হয়, তাহা সংসার সুখের দুর্গস্বরূপ।
পারিবারিক সুখের আর এক অন্তরায় আতিশয্য। কোন বিষয়েই আতিশয্য বাঞ্ছনীয় নহে। সামঞ্জস্য রক্ষা করা প্রাকৃতিক নিয়মের এক প্রধান লক্ষণ। মানুষের হৃদয়মনের কোন ব্যৃত্তি বা ভাব অস্বাভাবিক রূপে আতিশয্য লাভ করিলে, মানবজীবন বিকৃত এবং অক্ষম হইয়া পড়ে। সমঞ্জসীভূত উন্নতি সাধনেই মনুষ্য জীবনের সৌন্দর্য্য ও কার্য্যকারিতা অবস্থিতি করে। কোন বিষয়ে আতিশয্য হইলেই জীবনের সৌন্দর্য্য ও কার্য্যকারিতার ব্যাঘাত ঘটিয়া থাকে। আত্মরক্ষার্থে এবং আত্মজনের হিতার্থে অর্থসঞ্চয় করা যেমন মনুষ্যমাত্রেরই কর্ত্তব্য, তেমনিই আবার দয়াদাক্ষিণ্য প্রভৃতি সদ্গুণের বিকাশ দ্বারা চরিত্রের উৎকর্ষ সাধন ও সমাজের হিতসাধন করিবার জন্য, দান এবং পরোপকার করাও মানুষের অবশ্য কর্ত্তব্য। কিন্তু সঞ্চয় বা দান, ইহার কোন বিষয়েই আতিশয্য প্রার্থনীয় নহে। সঞ্চয়ে আতিশয্য অবলম্বন করিলে, মানুষ কার্পণ্য অবলম্বন করিয়া কেবল যে দান বা পরোপকারেই নিবৃত্ত থাকে, তাহা নহে, আত্মহিত এবং আত্মজনের প্রয়োজন সাধনার্থে ব্যয় করিতেও কুণ্ঠিত হইয়া থাকে। চন্দনভারবাহী গর্দ্দভ যেমন উহার ভারই উপলব্ধি করিতে পারে, উহার অন্যান্য গুণ হৃদয়ঙ্গম করিতে পারে না, কৃপণ ব্যক্তিও সেইরূপ সংসারের ভার বহন করে এবং ঐ ভার মাত্র উপলব্ধি করিতে পারে— পারিবারিক জীবনের মাধুর্য্য হৃদয়ঙ্গম করিতে অসমর্থ।[১] এইজন্য কবি অমরভাষায় সমৃদ্ধিশালী কৃপণ ব্যক্তিদিগকে সম্ভাষণ করিয়া বলিয়াছেন—“তুমি ধনী হইলেও দরিদ্র। গর্দ্দভ উহার নিপীড়িত পৃষ্ঠে পিণ্ডীভূত সুবর্ণরাশির ভার বহন করে, তুমিও সেইরূপ ধনের ভার মাত্র বহন করিয়া পথে একটুকু অগ্রসর হইতেছ, এবং পরিশেষে মত্যু আসিয়া তোমায় সেই ভার হইতে বিমুক্ত করিতেছে।[২] ব্যয়কুণ্ঠতা যেমন একদিকে অন্যায়, সেইরূপ অপরদিকে দান বা পরোপকারে আতিশয্য অবলম্বন করিলেও মানুষ অপব্যয়ী এবং অপরিণামদর্শী হইয়া সর্বস্বান্ত হইয়া থাকে, এবং পরিণামে বিপৎকালে আত্মরক্ষা বা আত্মজনের প্রতি অবশ্য কর্ত্তব্যকার্য্যও করিয়া উঠিতে পারে না। কার্পণ্য এবং অমিতব্যয়িতা হইতে দূরে থাকিয়া, জীবনযাত্রা নির্ব্বাহ করিবার চেষ্টা করাই প্রকৃত জ্ঞানী লোকের কর্ত্তব্য।
পারিবারিক সুখের আর এক অন্তরায়, পারিবারিক জীবনে শ্রদ্ধর অভাব।