পাতা:বিদ্যাসাগর জননী ভগবতী দেবী.pdf/৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫২
ভগবতী দেবী
৫২

শাস্ত্রে আছে:—“ক্ষুধাতে প্রজ্ঞা নষ্ট করে, ধর্ম্মবুদ্ধি বিলুপ্ত হয়। যাহার জ্ঞান ক্ষুধাতে নষ্ট হইয়াছে, তাহার ধৈর্য্যও থাকে না। যে বভুক্ষাকে জয় করে, সে নিশ্চিত স্বর্গ জয় করে। যেখানে দান প্রবৃত্তি থাকে, সেখানে ধর্ম্ম কখনও অবসন্ন হয় না। মনুয্যের দ্রব্যার্জ্জন সূক্ষ্ম ব্যাপার। উপযুক্ত পাত্রে দান করা, তাহা হইতে শ্রেষ্ঠ। উপযুক্ত কালে দান, তাহার অপেক্ষাও শ্রেষ্ঠ, কিন্তু শ্রদ্ধাই সর্ব্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। স্বর্গ দ্বার অতি সূক্ষ্ম। মনুষ্য মোহবশতঃ তাহা দেখিতে পায় না। লোভবীজ তাহার অর্গলঘস্বরূপ। ক্রোধকর্তৃক তাহা রক্ষিত। অতএব তাহা অতি দুরাসদ। যে পুরুষেরা জিতক্রোধ, জিতেন্দ্রিয়, যোগযুক্ত, তপস্বী, ব্রাহ্মণ, এবং যাঁহারা যথাশক্তি দান করেন, তাঁহারাই তাহা দেখিতে পান। যাঁহার শক্তি সহস্র পরিমিত, তিন শত দান করিলে যে ফল হয়, যাঁহার শক্তি শত পরিমিত, তিনি দশদান করিলেই সেই ফল হয়। শক্তি অনুসারে কেবল জলদান করিলেও সেই ফল হয়। মহামুল্যদানে ধর্ম্ম প্রীত হন না, ন্যায়লবদ্ধ সামান্য বস্তু শ্রদ্ধাপূতচিত্তে দান করিলে সন্তুষ্ট হন। ঐশ্বর্য্য মনুষ্যের পুণ্যের কারণ নহে। সজ্জনগণ আপনার শক্তিতে যাহা সদুপায়ে উপার্জ্জন করেন, বিবিধ যজ্ঞ, সেই ন্যায়লদ্ধ ধনের তুল্য পুণ্যের কারণ নহে। ক্রোধ দান ফল নষ্ট করে। লোভ থাকিলে কেহ স্বর্গে যাইতে পারে না। ন্যায়বৃত্তি দ্বারাই দানবিৎ স্বর্গপ্রাপ্ত হন। রন্তিদেব নামে রাজা দরিদ্রাবস্থায় শুদ্ধচিত্তে কেবল একটু জলদান করিয়াই স্বর্গে গমন করিয়াছিলেন। নৃগ রাজা ব্রাহ্মণগণকে সহস্র গো দান করিয়াও একটি পরকীয় গো দান করিয়াছিলেন বলিয়া তাঁহার নরকগমন হইয়াছিল। উশীনর পুত্র শিবিরাজা আত্মমাংস দান করিয়া পুণ্যবান্‌গণের প্রাপ্য যে লোক তাহা লাভ করিয়া আনন্দ ভোগ করিতেছেন।[১] ফলতঃ পারিবারিক জীবনের সমস্ত বিষয়ই শ্রদ্ধাপূতচিত্তে সম্পন্ন করা সর্ব্বতোভাবে বিধেয়।

 পারিবারিক সুখের প্রধান অন্তরায় মানবের ধর্ম্মহীনতা। ধর্ম্মভাব ও ধর্ম্মানুষ্ঠানবিহীন পরিবার বর্ত্তমান ও ভাবী দুর্গতির উৎপত্তি স্থান। যাঁহারা ঈশ্বরের অযাচিত স্নেহের প্রতিনিধিজ্ঞানে জনকজননীকে ভক্তি করেন, যাঁহারা পতিপত্নীতে প্রাণের বিনিময় করিয়া, সম্মিলিতহৃদয়ে ঈশ্বরদত্ত সংসার ভোগ করেন, যাঁহারা ঈশ্বরের ভাবে অনুপ্রাণিত হইয়া সন্তান প্রতিপালন করেন, তাঁহারাই যথার্থ পবিবার প্রতিপালন করেন। পরিবারসাধন তাঁহাদিগেরই পক্ষে তৃপ্তি ও সদ্গতির হেতু হইয়া থাকে। যাঁহারা পারিবারিক ক্ষুদ্র মহৎ প্রত্যেক ব্যাপার ঈশ্বরের অযাচিত করুণার অভিনয়রূপে প্রত্যক্ষ করিতে পারেন, পরিবার তাঁহাদিগের নিকট স্বর্গসুখের প্রতিকৃতিস্বরূপ, পারিবারিক উন্নতির জন্য তাঁহাদিগের পরিশ্রম, পুণ্য-

  1. মহাভারত—শান্তিপর্ব্ব।