ভয় হইবে। স্ত্রীলোকদিগের মনে অহঙ্কারের উদয় হইবে, এবং গহস্থালী কার্য্যে তাহাদের সেরূপ যত্ন থাকিবে না। দীন দরিদ্রের প্রতি অবজ্ঞা প্রকাশ করিবে। অলঙ্কার না করিয়া ঐ টাকায় যথেষ্ট অন্নব্যয় করিতে পারিব। তাহাতে দরিদ্র বালকেরা আমাদের বাটীতে ভোজন করিয়া লেখাপড়া শিখিতে পারিবে।” বাটীর স্ত্রীলোকদিগকে তাঁহারা সূক্ষ্মবস্ত্র পরিধান করিতে দিতেন না। কখন কখন কলিকাতা হইতে সূক্ষ্মবস্ত্র পাঠাইয়া দিলে অত্যন্ত বিরক্তি প্রকাশ করিতেন। বাটীর স্ত্রীলোকদিগের জন্য মোটা বস্ত্র ক্রয় করিয়া দিতেন। এবং পাকাদি সাংসারিক কার্য্য করিবার জন্য সর্ব্বদা উপদেশ দিতেন।
ভগবতী দেবী পারিবারিক প্রত্যেক কার্য্যই শ্রদ্ধাপূতচিত্তে সম্পন্ন করিতেন। গৃহে কোন অতিথি উপস্থিত হইলে, ভগবতী দেবী স্বহস্তে পরিবেশন করিয়া ভোজন না করাইলে নিরতিশয় দঃখানুভব করিতেন। নবাগত ব্যক্তিদিগের যাহাতে কোন প্রকার ক্লেশ না হয়, তজ্জন্য তিনি প্রাণপণে যত্ন ও চেষ্টা করিতেন। শারীরিক অসুস্থ থাকিলেও তিনি অতিথিদিগকে আহার না করাইয়া শয়ন করিতেন না। অনেক পরিবারে এরূপ দেখা যায় যে, পরিবারস্থ লোকেরা যে প্রকার সুখ ও সুবিধায় আহারাদি করে, অতিথিদিগের ভাগ্যে সেরূপ ঘটে না। কিন্তু ভগবতী দেবীর গৃহে সেরূপ বৈষম্য ছিল না। সকলকে সমানভাবে আহার্য্য প্রদত্ত হইত; বরং অভ্যাগতদিগের বিশেষ সমাদর হইত। এক সময়ে স্কুলসমূহের ইনস্পেক্টার প্রতাপনারায়ণ সিংহ ভগবতী দেবীর গৃহে অতিথি হন। ভগবতী দেবী একখানি থালায় করিয়া স্বহস্তে অন্ন আনয়ন করিলে, প্রতাপনারায়ণ বলিলেন, “বাটীর সকলে যে প্রকার শালপাতায় ভোজন করেন, আমিও তাঁহাদের সঙ্গে একত্র বসিয়া তদ্রুপ ভোজন করিব।” ভগবতী দেবী এই কথা শুনিয়া ঈষৎ হাস্য করিয়া বলিলেন, “তুমি বড় ঘরের ছেলে। তুমি যে সকলের সহিত একত্র হইয়া শালপাতায় খাইতে চাহিতেছ, ইহা অতি আশ্চর্য্যের কথা। আমার মনে হয় তোমার প্রকৃত জ্ঞানলাভ হইয়াছে।”
তিনি বিদেশীয় অনুপায় রোগীদের শুশ্রূষাদি কার্য্যে বিশেষরূপ যত্নবতী ছিলেন। কাহারও নিরামিষ ব্যঞ্জন, কাহারও মৎস্যের ঝোল প্রভৃতি স্বয়ং প্রস্তুত করিয়া দিতেন, তাঁহাকে এই কার্য্যে কেহ কখনও বিরক্ত হইতে দেখে নাই। বাটীর অন্যান্য স্ত্রীলোকেরাও এই সকল বিষয়ে তাঁহার অনুকরণ করিতেন। বিবাহিতা বিধবাদের মধ্যে কেহ পীড়িত হইয়া চিকিৎসার জন্য বাটীতে আসিলে, অথবা অপর কেহ রোগগ্রস্ত হইয়া উপস্থিত হইলে, ভগবতী দেবী তাহাদের মলমূত্রাদি পর্য্যন্ত পরিষ্কার করিতেন, তাহাতে কিছুমাত্র ঘণা বোধ করিতেন না।
ভগবতী দেবী প্রত্যহ মধ্যাহ্নে রন্ধনাদি সম্পন্ন করিয়া এবং আশ্রিত অতিথিদিগকে ভোজন করাইয়া বাটীর দ্বারে দাঁড়াইয়া থাকিতেন। হাটবারে হাটুরেরা ফিরিবার সময়, তিনি তাহাদিগের মধ্যে যাহাদের মুখ শুষ্ক দেখিতেন, তাহাদিগকে