পাতা:বিদ্যাসাগর জননী ভগবতী দেবী.pdf/৭২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬২
ভগবতী দেবী

সময়ে কালবৈশাখীর ন্যায় মেঘ, জল, প্রবল বাত্যা বহিয়া যাইত। ভগবতী দেবী ক্রোধাগারের দ্বার বন্ধ করিয়া শয়ন করিয়া থাকিতেন। ঠাকুরদাস জানিতেন, ভগবতী বৃহৎ মৎস্য অতিশয় ভালবাসেন। তিনি তখন মৎস্য অন্বেষণে বাহির হইতেন এবং যেখানে পাইতেন একটি বৃহৎ মৎস্য আনয়ন করিয়া ক্রোধাগারের দ্বারদেশে সজোরে নিক্ষেপ করিতেন। মৎস্য পতনের শব্দ শ্রবণমাত্র ভগবতী দেবী দ্বার উন্মোচন করিতেন এবং আস্যে হাস্য ও অপাঙ্গে অশ্রু লইয়া বাহির হইতেন। ছাই ও বঁটি লইয়া মাছ কুটিতে বসিতেন। এইরপে মধুর মিলন হইত।

 এইরূপ পারিবারিক সুখস্বাচ্ছন্দে অনেক কাল অতিবাহিত হইল। শেষে একদিন রজনীতে ঠাকুরদাস স্বপ্নে দেখিলেন, বীরসিংহ বাস্তুভিটা শ্মশানে পরিণত হইয়াছে। সংসারে ঘোর বিশৃঙ্খল উপস্থিত হইয়াছে। এইরূপ স্বপন দেখিলে পর ঠাকুরদাসের অতিশয় মানসিক অশান্তি উপস্থিত হইল। তিনি বীরসিংহ পরিত্যাগ করিয়া তীর্থবাস করিবেন স্থিরসকল্প করিলেন। সকলে তাঁহাকে বিশেষরূপে বুঝাইতে লাগিল, কিন্তু কিছুতেই তাঁহার মন প্রবোধ মানিল না। পরিশেষে তিনি কাশীধামে যাত্রা করিলেন। ভগবতী দেবী সংসারসাধন, দরিদ্র-পালন ও সেবাধর্ম্মানুষ্ঠানের জন্য বীরসিংহে অবস্থিতি করিতে লাগিলেন। ঠাকুরদাসের কাশীবাসের সঙ্গে সঙ্গেই সংসারে ঘোর বিশৃঙ্খলা উপস্থিত হয়। ভগবতী দেবী সংকল্পিত সদাব্রতানুষ্ঠানের নিমিত্ত আমরণ যত্নবতী ছিলেন। কিন্তু ঠাকুরদাস তীর্থযাত্রা কালে তাঁহার মানসিক শান্তি যে অনেক পরিমাণে হরণ করিয়া লইয়া গিয়াছিলেন, পাঠকগণ নিম্নলিখিত বিবরণ পাঠে তাহা সুস্পষ্ট হৃদয়ঙ্গম করিতে পারিবেন।

 ১২৭৬ সালে শ্রাবণ মাসে ভগবতী কাশীধামে গমন করেন। এবং সেখানে কয়েক অবস্থিতি করিয়া একদিন ঠাকুরদাসকে বলিলেন, “আপনাকে এখনও অনেকদিন বাঁচিতে হইবে। কায়িক অনেক কষ্ট পাইতে হইবে, এত তাড়াতাড়ি তীর্থস্থানে আগমন করা ভাল হয় নাই। দেশে চলুন, আপনার দ্বারা দেশের লোকের অনেক উপকার হইবে। আর কিছুকাল পরে শেষে তীর্থবাস করিবেন।” কিন্তু ঠাকুরদাস তীর্থবাস পরিত্যাগ করেন নাই।

 ভগবতী দেবীর বিবিধ সদ্‌গুণের উজ্জ্বল দৃষ্টান্তসহ বিভিন্ন পরিচ্ছেদে বিভক্ত করিয়া এই পুস্তকে সন্নিবেশিত হইল। সে সমুদায় পাঠকগণ তাঁহার পারিবারিক জীবনের অন্তর্ভুক্ত বিবেচনা করিবেন।