অন্নপূর্ণা দেবীর মূর্ত্তিমতী প্রতিকৃতি আপনাদের সম্মুখে উপস্থিত কি না! শুদ্ধ অন্নদান করিয়াই মাতা আজ ক্ষান্ত নহেন। পাঠকগণ, ঐ দেখন সন্তানগণের রুক্ষ্ম কেশপাশ দেখিয়া মাতা কিরূপ মর্ম্মপীড়িত হইয়াছেন! দরিদ্রগণের ভোজনান্তে ভগবতী তিন কন্যা সমভিব্যাহারে তাহাদিগের মধ্যে সমুপস্থিত হইয়াছেন। মাতার স্নেহের উৎস আজ উদ্বেলিত—উচ্ছলিত। প্রেমের প্রবল বন্যা অপ্রতিহত গতিতে প্রবাহিত। সেই প্রবল প্রবাহে আজ হাড়ি, ডোম, তিওর, বাগ্দী জাতিবিচার ভাসিয়া গিয়াছে। ঐ দেখুন, কন্যাগণ নারিকেল তৈল ও বাটা হলুদ স্ত্রীলোকদিগকে মাখাইয়া দিতেছেন, আর ভগবতী দেবী এয়েদিগের ললাটে স্বয়ং সিন্দুর বিন্দু পরাইয়া দিতেছেন! ধন্য পুণ্যের লীলাক্ষেত্র ভারতভূমি! এ দৃশ্য তোমাতেই সম্ভবে।
হিন্দু পেট্রিয়টের সংবাদদাতা ১২৭৩ সালের ১৫ই শ্রাবণ এই হৃদয়স্পর্শী সেবাব্রত সম্বন্ধে লিখিয়াছিলেন “বীরসিংহ গ্রামে বিদ্যাসাগর মহাশয়ের মাতা প্রত্যহ ৪৫ শত লোককে অকাতরে, অকুণ্ঠিতচিত্তে অন্নদান করিতেছেন।”
ক্রমে দুর্ভিক্ষপীড়িত জনগণের সংখ্যা বৃদ্ধি পাইতে লাগিল। তখন এই সংবাদ কলকাতায় বিদ্যাসাগর মহাশয়ের নিকট প্রেরিত হইল। তিনি উত্তরে লিখিলেন যে, “স্বগ্রাম বীরসিংহ ও উহার সন্নিহিত ৫৬টি গ্রামের দরিদ্রগণকে প্রত্যহ ভোজন করাইতে পারিব। অন্যান্য গ্রামের লোককে কেমন করিয়া খাওয়াইতে পারি? যেহেতু আমি ধনশালী লোক নহি। অপরাপর গ্রামের দরিদ্রদিগকে প্রত্যহ ভোজন করাইতে হইলে অনেক অর্থ প্রয়োজন। এমন স্থলে জাহানাবাদের ডেপুটী ম্যাজিস্ট্রেট বাবু ঈশ্বরচন্দ্র মিত্রকে আমার নাম করিয়া বলিবে যে, তিনি জাহানাবাদ মহকুমার দুর্ভিক্ষের কথা গবর্ণমেণ্টের নিকট রিপোর্ট করিলে আমি এখানে লেপ্টেনেণ্ট গবর্ণর সিসিল বীডনকে বলিয়া সাহায্য করাইতে পারিব।”
বিদ্যাসাগর, নিজ জন্মভূমি বীরসিংহ ও তৎসংলগ্ন পাথরা, কেঁচে, অর্জ্জুনআড়ী, বুয়ালিয়া, রাধানগর, উদয়গঞ্জ, কুরাণ, মামুদপুর প্রভৃতি কয়েকখানি গ্রামবাসী নিরুপায় লোকদিগের প্রতি দয়া করিয়া, বীরসিংহে অন্নসত্র স্থাপন করেন। প্রথমতঃ গ্রামস্থ লোকদিগের ভোজন করিবার এই ব্যবস্থা হয় যে, যে ভদ্রলোক অন্নসত্রে ভোজন করিতে কুণ্ঠিত হইবেন, তাঁহারা লোকসংখ্যা হিসাবে আহার্য্য পাইবেন। বিদ্যাসাগর মহাশয় স্বয়ং এরূপ আহার্য্যের ব্যবস্থা করিয়া দিয়া কলিকাতা আগমন করেন। শ্রাবণ মাসে স্বতন্ত্র বাটীতে অন্নসত্র স্থাপিত হয়। ভাদ্র মাস হইতে রাধানগর, কেঁচে, অর্জ্জুনআড়ী প্রভৃতি চতুর্দ্দিকের লোক আসিয়া ভোজন করায়, ক্রমশঃ লোকসংখ্যা বৃদ্ধি হইতে লাগিল, এই সমাচার কলিকাতায় বিদ্যাসাগরকে লিখিলে, তিনি তদুত্তরে লিখিলেন, ‘‘অভূক্ত যত লোক আসিবে, সকলকেই সমাদর পুর্ব্বক ভোজন করাইবে, কেহ যেন অভুক্ত ফিরিয়া না যায়। শীঘ্র টাকা পাঠাইতেছি এবং আমিও সত্বর বাটী যাইতেছি।” যে কয়েক মাসদেশে