অধমর্ণ আহার করিতে আসিত, ভগবতী দেবী তাহাকে দেখিবামাত্র জিব কাটিয়া বলিতেন, “তাই ত বাবা, আমার মনে ছিল না। একটুখানি বস, আমি আবার ভাত রাঁধিয়া দিতেছি।” এই কথা বলিয়া দয়াশীলা ভগবতী দেবী তৎক্ষণাৎ আহারাদি প্রস্তুত করিয়া দিতেন।
এক সময়ে বিদ্যাসাগর মহাশয় কলিকাতা হইতে কয়েকখানি লেপ প্রস্তুত করাইয়া দেশে পাঠাইয়া দেন। গ্রামের কয়েকজন দরিদ্র ব্যক্তি শীতে অতি কষ্টে নিশাযাপন করে শ্রবণ করিয়া ভগবতী ঐ লেপ কয়েকখানি তাহাদিগকে দান করেন। পরিশেষে বিদ্যাসাগর মহাশয়কে পত্র লিখিলেন, “তুমি যে কয়েকখানি লেপ পাঠাইয়া দিয়ছি, তাহা গ্রামের কয়েকজন দরিদ্র ব্যক্তিকে দিয়াছি। আমাদের। জন্য কয়েকখানি কম্বল শীঘ্র পাঠাইয়া দিবে।” এই কথা শুনিয়া বিদ্যাসাগর বাটির জন্য আবার কয়েকখানি লেপ প্রস্তুত করাইয়া পাঠাইয়া দিলেন। মাতাকে লিখিলেন, “ঐরূপ বিতরণের জন্য আপনার যে কয়েকখানি লেপের প্রয়োজন আমাকে সত্ত্বর লিখিবেন, আমি এখান হইতে পাঠাইয়া দিব।’ এইরূপে ভগবতী দেবীর দয়া ও পরোপকার, প্রবৃত্তি পর্য্যালোচনা করিলে মনে হয়, তিনি পরের উপকারের জন্যই জন্মিয়াছিলেন, এবং পরের উপকার করিয়াই আপনার জন্ম সার্থক করিয়াছিলেন।
দ্বাদশ পরিচ্ছেদ॥ সরলতা ও পবিত্রতা
যেখানে সরলতা সেইখানেই পবিত্রতা বিরাজ করে। কুটিলতা ও স্বার্থপরতা সরল ব্যক্তির হৃদয়কে কখন কলঙ্কিত করিতে পারে না। আলোকে ও অন্ধকারে ষেরূপ প্রভেদ, সরলতা এবং কপটতায় সেইরূপ প্রভেদ। চন্দ্রের বিমল আলোকের ন্যায় সরলতা মানবচরিত্রকে উজ্জ্বল করিয়া রাখে। সরলতার সহিত সত্যের অতি নিকট সম্বন্ধ। বাস্তবিক সরলতা সত্যের ভিত্তিরূপ। মুসলমান ধর্ম্মের প্রবর্ত্তক মহম্মদ যখন বিশ্বাস করিলেন, ঈশ্বর এক এবং নিরাকার, তখন কার্যেও সেই মত প্রচার করিতে লাগিলেন, ইহাতে চতুর্দ্দিক হইতে শত্রুগণ তাঁহার প্রাণনাশ করিতে উদ্যত হইলে, মহম্মদের পিতৃব্য আবুতালাক এই চক্রান্তের বিষয় অবগত হইয়া, একদিন মহম্মদকে বলিলেন, “মহম্মদ, আমি তোমাকে সন্তানতুল্য স্নেহ করিয়া থাকি। কেহ যে তোমার মস্তকের এক গাছি কেশ উৎপাটন করে, ইহা আমার অভিপ্রেত নহে। অতএব বৎস! ক্ষান্ত হও, এখন হইতে তোমার হৃদয়ের বিশ্বাস গোপন করিয়া লোকের মনের মত কার্য্য কর।”
আবুতালাকের এই কথা শ্রবণ করিয়া, মহম্মদ অতি বিনীতভাবে বলিলেন, “আপনি স্নেহের বশীভূত হইয়া যাহা আদেশ করিতেছেন, তাহা সম্পূর্ণ কপটতা।