সেইখানে আসিয়া উপস্থিত হইলেন। ব্রাহ্মণের হস্তে একটি পুটিকা ছিল। ব্রাহ্মণ সেই পুটিকা হইতে একখানি শুষ্ক বস্ত্র বাহির করিয়া পুটিকাটি পুষ্করিণীর ধারে একটি ঝোপের মধ্যে রাখিয়া স্নানার্থে পুষ্করিণীতে অবতরণ করিলেন। স্নানার্থে ব্রাহ্মণ শুষ্ক বস্ত্র পরিধান ও গামছা দ্বারা মস্তক আবৃত করিয়া সধ্যাহ্নিক করিতে করিতে দ্রুতপদে চলিয়া গেলেন। তিনি পূটিকার কথা একেবারে বিস্মৃত হইয়া গিয়াছিলেন। ভগবতী দেবী স্নানান্তে উপরে উঠিলে, ঘটনাক্রমে পুটিকার দিকে তাঁহার দৃষ্টি আকৃষ্ট হইল। ভগবতী দেবী মনে করিলেন, ঐ ব্রাহ্মণ নিশ্চয়ই ভ্রমক্রমে ইহা রাখিয়া গিয়াছেন। তিনি পুটিকা খুলিয়া দেখিলেন, কয়েকখানি নতন বস্ত্র, কর্ণের দুইখানি স্বর্ণালঙ্কার ও চল্লিশটি মুদ্রা রহিয়াছে। ভগবতী দেবী মহাবিপদে পড়িলেন। তিনি সমস্ত দিন সেই পুটিকাটি রক্ষা করিয়া সেইখানে বসিয়া রহিলেন। সন্ধ্যার কিঞ্চিৎ পুবে ব্রাহ্মণ ক্রন্দন করিতে করিতে শশব্যস্তে তথায় আসিয়া উপস্থিত হইলেন। ভগবতী দেবীকে দেখিয়া বলিলেন, “মা আমার সর্বনাশ হইয়াছে! আমি কন্যাদায়গ্রস্ত। রাত্রি প্রভাতে কন্যার বিবাহ। আমি মধ্যাহ্নে এই পরিণীতে স্নান করিতে আসিয়াছিলাম। আমার নিকট একটি পুটিকা ছিল। ভিক্ষা করিয়া যাহা কিছু সংগ্রহ করিয়াছিলাম, তাহা ঐ পুটিকাভ্যন্তরেই ছিল। মা, এখন আমার উপায় কি?” ভগবতী দেবী ব্রাহ্মণকে প্রবোধ দিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “পুটিকাতে আপনার কি কি দ্রব্য ছিল?” ব্রাহ্মণ সত্য কথা বলিলেন।
ভগবতী দেবী বলিলেন, ‘আপনি যে কন্যাদায়গ্রস্ত তাহা আমি পুবেই জানিতে পারিয়াছি। কারণ, তাহা না হইলে আপনার এতদূর চিত্তভ্রম ঘটিবে কেন?” তৎপরে পুটিকাটি ব্রাহ্মণের হস্তে দিয়া বলিলেন, “দেখুন আপনার সমস্ত দ্রব্য আছে কি না? আমি তদবধি এই পুটিকা রক্ষা করিয়া এইখানেই বসিয়া আছি। যাহা হউক আপনি আমাকে নিশ্চিত করিলেন। ব্রাহ্মণ আনন্দাশ্র; ত্যাগ করিতে করিতে বলিলেন, “মা, তুমি আমার জাত কুল রক্ষা করিলে। মা, আমি এখনও জল গ্রহণ করি নাই। আমি অভীষ্ট দেবতার নিকট প্রার্থনা করিতেছি, তুমি যেন ধনে বংশে শ্রীবৃদ্ধি লাভ কর।’ ব্রাহ্মণ তখনও পর্যন্ত জলগ্রহণ করেন নাই শুনিয়া ভগবতী দেবী পরম সমাদরে তাঁহাকে সঙ্গে করিয়া গৃহে আনিলেন। পরে ব্রাহ্মণের পরিচর্যা করিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “আপনার যে অর্থ সংগৃহীত হইয়াছে, তাহাতে আপনি কন্যাদায় হইতে কি মুক্তিলাভ করিতে পারিবেন?” ব্রাহ্মণ উত্তর করিলেন, “না মা, আরও ১০|২০ টাকা প্রয়োজন।” তখন ভগবতী দেবী বিংশতি মুদ্রা ব্রাহ্মণের হস্তে দিয়া বলিলেন, “গরীব ব্রাহ্মণের মেয়ের এই কয়টি মুদ্রা দয়া করিয়া গ্রহণ করিবেন।” ব্রাহ্মণ বিস্মিত হইয়া অশ্রুপূর্ণলোচনে গদগদ ঘরে বলিতে লাগিলেন, “মা, তুমি দেবী, না মানবী! আমার ভ্রমই যে আমার পক্ষে পরম মঙ্গলজনক হইল। কারণ, আজ সাক্ষাৎ দেবীমুর্ত্তির