পাতা:বিদ্যাসাগর জননী ভগবতী দেবী.pdf/৯০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮০
ভগবতী দেবী

দর্শন লাভ আমার ভাগ্যে ঘটিল।” এই কথা বলিয়া ব্রাহ্মণ তথা হইতে প্রস্থান করিলেন।


ত্রয়োদশ পরিচ্ছেদ॥ সময়ের সদ্ব্যবহার

 একজন ইউরোপীয় প্রসিদ্ধ পণ্ডিত বলিয়াছেন, “লোকে সময়ের অভাব বলিয়া আক্ষেপ করিয়া থাকে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তাহাদের কার্য্যের তুলনায় এত অধিক সময় রহিয়াছে যে, তাহার ব্যবহার সম্বন্ধে তাহারা নিতান্ত অনভিজ্ঞ। তাহারা হয় নিতান্ত অলসভাবে সময় নষ্ট করে, না হয় নিতান্ত উদ্দ্যেশ্যবিহীন কার্য্যে সময় অতিবাহিত করিয়া থাকে। লোকে আপনাদিগের জীবিত কাল অতি সঙ্কীর্ণ বলিয়া সাতিশয় ক্ষোভ প্রকাশ করে বটে, কিন্তু কার্য্যক্ষেত্রে তাহারা সময়ের প্রতি এতদূর অবজ্ঞা ও অনাদর প্রকাশ করিয়া থাকে, যেন বোধ হয়, তাহাদের জীবিতকাল: অনন্ত ও নিত্যস্থায়ী।”

 দীর্ঘ জীবনাকাঙ্ক্ষা মানবজাতির সাধারণ ধর্ম্ম। সকলেই দীর্ঘ জীবনের জন্য নিরতিশয় আগ্রহ প্রকাশ করিয়া থাকে বটে, কিন্তু সময়ের যে সকল অংশের সমষ্টি দ্বারা জীবিতকাল পূর্ণ হয়, তৎসমুদয় ইহার অতিশয় অবহেলার সহিত নষ্ট করিয়া ফেলে। পল, দণ্ড, প্রহর প্রভৃতি সময়ের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশগলি একত্র হইয়া দিন, মাস, বর্ষ, যুগ প্রভৃতি হয়, এবং এই দিন, মাস প্রভৃতির সমষ্টিই মনুষ্যের জীবিতকাল বলিয়া পরিগণিত হইয়া থাকে। যাহারা পল, দণ্ড, প্রহর প্রভৃতির অপব্যয় করে, তাহারা ক্রমে বর্ষ,যুগ প্রভৃতিরও অপব্যয়ের কারণ হয়, অথাৎ তাহারা আপনাদিগের অমূল্য জীবন বৃথাই নষ্ট করে।

 পথিক যেমন দেশপর্যটনকালে, বিশ্রামস্থান বা পান্থনিবাস পাইবার আশায়, জনপ্রাণিশন্য প্রান্তর দ্রুতবেগে অতিক্রম করিয়া যায়, মানবগণ সেইরপ সখ বা লাভের কামনায়, সময়ের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশ এবং পরিশেষে বর্ষ পর্যন্ত অবলীলাক্রমে বৃথা যাপন করে। জীবৎকালের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশগুলি নষ্ট করিয়া দীর্ঘ জীবন কামনা করা এবং সময় হারাইয়া কার্য্যের অনুষ্ঠান করা, উভয়ই তুল্যরপ নির্বুদ্ধিতা ও অপরিণামদর্শিতার কার্য্য।

 এই বিশ্বসংসারে মানবজাতির যত প্রকার কর্তব্য কার্য্য আছে, তন্মধ্যে নিঃস্বার্থ পরোপকাররুপ পুণ্যকার্য্যই সর্বশ্রেষ্ঠ। মানবসমাজে এতাদৃশ পুণ্যব্রতের কিছুমাত্র অভাব নাই। অজ্ঞানকে জ্ঞানদান, দরিদ্রের অভাববিমোচন, বিপন্নের বিপদধার, শোকার্ত্তের শোকাপনোদন, রগ্নের শুশ্রষা ইত্যাদি পবিত্র কর্ম ভগবতী দেবীর জীবনে নিত্যই সংঘটিত হইত। পরস্পরবিরুদ্ধ পক্ষের বিবাদভঞ্জনপূর্ব্বক তাহাদিগের মধ্যে সৌহার্দ্যস্থাপন, চরিত্রবান লোকের প্রতি শ্রধাপ্রদর্শন, মাৎসর্য্য-