শালীর বিষেষভাব সংযমনের চেষ্টা, কোপন ব্যক্তির ক্রোধোপশমন, এবং কুসংস্কারাপন্ন লোকের মতসংশোধন ইত্যাদি নানাবিধ সৎকার্য্যে সময়ক্ষেপ করিয়া মনে মনে অপরিসীম আনন্দ উপভোগ করিবার সুবিধা তাঁহার জীবনে প্রায় সর্ব্বদাই উপস্থিত এই সমস্ত সামাজিক পুুণ্যকার্ষ্যের অনুষ্ঠানে যিনি কালযাপন করেন তাঁহার সময় কি কখন অলসভাবে অতিবাহিত হইতে পারে?
ভগবতী দেবী অতি প্রত্যুষে শয্যা পরিত্যাগ করিয়া সাংসারিক কার্ষ্যে মনোনিবেশ করিতেন। এবং কোন না কোন পারিবারিক সদনুষ্ঠানে দিবাভাগ অতিবাহিত হইত। তিনি স্বহস্তে রন্ধন করিতেন এবং সকলকে সমভাবে পরিবেশন করিতেন। অতিথি, কুটম্ব, আত্মীয় স্বজনের পরিচর্য্যা তাঁহার নিত্য নৈমিত্তিক কার্য্য ছিল। রজনীর দেড় ঘটিকা পর্য্যন্ত তিনি বিবিধ গার্হস্থ্য ধর্ম্মানুষ্ঠানেই ক্ষেপণ করিতেন। অতঃপর আরও দুই ঘণ্টা একাকিনী বসিয়া চরকায় সুতা কাটিতেন। সুতরাং দিবাযামিনীর মধ্যে তিন ঘণ্টা মাত্র নিদ্রার সুকোমল ক্রোড়ে বিশ্রামসুখ লাভ করিতেন।
সময়ের সদ্ব্যবহারার্থে অন্যবিধ ধর্ম্মকর্ম্ম মানবজীবনে অনুষ্ঠিত হওয়া একান্ত প্রয়োজন। যখন আমরা সংসারের কোলাহল হইতে দূরে অবস্থান করি, বৈষয়িক কর্ম্মক্ষেত্র হইতে ক্ষণকালের জন্য অবসরগ্রহণ করি, যখন একাকী নির্জ্জন স্থানে উপবেশন করি, তখন সেই পরম দেবতা, বিশ্ববিধাতা, অনাদি পুরুষের উপাসনায় নিযুক্ত হওয়া আমাদিগের অবশ্যকর্ত্তব্য। স্রষ্টার আরাধনায় ক্ষণকাল ব্যাপৃত থাকা প্রত্যেক মানুষেরই একটি গুরুতর কর্ত্তব্য কর্ম্ম। তাঁহার অর্চ্চনা ব্যতীত সংসারের তাড়নায় ছিন্ন ভিন্ন ও দলিত হৃদয়কে প্রকৃতিস্থ করিতে অভিলাষ করা বিড়ম্বনা মাত্র। যিনি মঙ্গলময় বিশ্বপিতার চরণপ্রান্তে উপনীত হইয়া, তৎসকাশে হৃদয়ের প্রার্থনা জ্ঞাপন করিতে পারেন, তিনি মনে মনে অনির্ব্বচনীয় আনন্দ উপভোগ করিয়া থাকেন। যখন তিনি ঈশ্বরোপাসনায় নিযুক্ত হন, তখন তাঁহার আত্মা ভগবদ্ভক্তিতে পরিপূর্ণ হয়, হৃদয়ে আশার সঞ্চার হয় এবং যে মহতী শক্তি তাঁহাকে বেষ্টন করিয়া রহিয়াছে, তাহার বিদ্যমাতার সম্যক উপলদ্ধি হয়। তিনি সকল ভয়, ভাবনা, শোক, দুঃখকেই রক্ষাকর্ত্তার চরণে সমর্পণ করিয়া স্বয়ং নির্ব্বিঘ্নে ও সুখশান্তিতে কালাতিপাত করিতে থাকেন। এই দুস্তর জীবনসমুদ্রের প্রভঞ্জনোত্থিত ফেনিল তরঙ্গের ঘাত প্রতিঘাত কেবল গভীরতাবিহীন অসার সংসারেই দেখিতে পাওয়া যায়। কিন্তু যাঁহারা মৌক্তিকপ্রসূ শুক্তির ন্যায় তাহার তলদেশে বসিয়া স্বীয় হৃদয়োপরি পরম রমণীয় দুর্লভ মুক্তার নির্ম্মাণে সচেষ্ট, তাঁহাদিগকে সেই উর্ম্মিমালার ভীম প্রকম্পন স্পর্শও করিতে পারে না। গভীরতা, হৃদয়ের পূর্ণতা সমাজের ঘূর্ণাবর্ত্তে সম্পাদিত হওয়া অসম্ভব; তজ্জন্য নিস্তব্ধ শান্তি-আবাসে ধীর চিন্তাপ্রবাহের প্রয়োজন।
ভগবতী দেবী দিবাভাগের কিয়দংশ এবং সন্ধ্যার সময় নিষ্ঠাবান্, হিন্দুর