“নষ্টে মৃতে প্রব্রজিতে ক্লীবে চ পতিতে পতৌ।
পঞ্চস্বাপৎসু নারীণাং পতিরন্যোবিধিরতে।”
এইরূপে তিনি যখন মনে ও জ্ঞানে স্থির করিলেন, বিধবাবিবাহ শাস্ত্রসঙ্গত, তখন তিনি ঐ প্রথা প্রচলন জন্য মন, প্রাণ, ধন সব সমর্পণ করিলেন। তৎপরে মাতাপিতার আশীর্বাদ গ্রহণ করিবার জন্য দেশে গমন করিলেন। ভগবতী দেবীর নিকট সমস্ত বিষয় নিবেদন করিলে, তিনি হৃষ্টচিত্তে উত্তর করিলেন, ‘বাবা, তুমি কি আমার যে সে ছেলে? তুমি যখন বিধবাবিবাহ শাস্ত্রসঙ্গত স্থির করিয়াছ, তখন আমি প্রসন্নমনে তোমাকে আশীর্বাদ করিতেছি। আহা! যদি জন্মদুঃখিনীদের কোন গতি করিতে পার, তাহা বাবা এখনই কর। কিন্তু বাবা, একবার কাজে হাত দিলে, তখন সমাজের ভয়ে, এমন কি কর্ত্তা বারণ করিলেও তুমি কোন মতে নিবৃত্ত হইবে না।”
তৎপরে বিদ্যাসাগর পিতাকে জিজ্ঞাসা করিলেও তিনি ঐরূপ উত্তরই দিয়াছিলেন। অধিকন্তু তিনি বলিয়াছিলেন, ‘'কার্য্যে প্রবৃত্ত হইবার পুর্ব্বে তুমি আর একবার উত্তমরুপে শাস্ত্রীয় প্রমাণগুলি দেখিবে।”
মাতাপিতৃভক্ত সন্তান বিদ্যাসাগর মাতাপিতার আদেশ স্বীয় জীবনাপেক্ষাও অধিকতর মূল্যবান বলিয়া মনে করিতেন। দশের সমষ্টি লইয়া সমাজ, দশের কল্যাণের জন্য সন্তানকে প্রাণাপেক্ষা প্রিয়তর বস্তু বলি দিতে উপদেশ দেওয়া জগতে এক বিচিত্র ব্যাপার! ধন্য ভগবতী দেবী! ধন্য তোমার কর্ত্তব্যবুদ্ধি! ধন্য তোমার কর্তব্যশিক্ষা! একে বাল্যবিধবাদিগের দুঃখে বিদ্যাসাগরের হৃদয় দগ্ধীভূত হইতেছিল, সেই দগ্ধহৃদয়ে মাতাপিতার আশীর্বাদরূপ পুণ্যহুতি প্রক্ষিপ্ত হওয়ায়, দ্বিগুণতর প্রজ্বলিত হইয়া উঠিল। কর্মবীর বিদ্যাসাগর কর্ত্তব্যবুদ্ধিরূপ আয়ুধে সন্নধ হইয়া অপ্রতিহত গতিতে কর্মক্ষেত্রে অগ্রসর হইতে লাগিলেন, জগৎ তাঁহার প্রতিকূলে দণ্ডায়মান হইয়াও তাঁহাকে সঙ্কল্পচ্যুত করিতে পারে নাই। ফলতঃ কর্ত্তব্যবুদ্ধির কি মহীয়সী শক্তি। যে কর্ত্তব্যজ্ঞানপ্রণোদিত হইয়া মহাজ্ঞানী সক্রেটিস তাঁহার প্রিয় শিষ্যকে বলিয়াছিলেন,—“ক্রিটো। আমি সর্বজনাধিগত অপরিবর্ত্তনীয় নিয়তি পরিহারার্থ কোথায় গমন করিব?” যে নৈতিক বাধ্যতাপ্রণোদিত হইয়া ধর্মবীর ঈশা অসহ্য ক্রুশ যন্ত্রণা সহ্য করিয়াছিলেন; মহাত্মা সেণ্ট পল রোমনগরস্থ কারাগৃহে সিংহমখে নিক্ষিপ্ত হইবার জন্য নির্ভীক হৃদয়ে প্রতীক্ষা করিয়াছিলেন; বীরহৃদয় মাটিন লুথার পোপের ধর্ম্মমতের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান করিয়াছিলেন; ধর্মবীর পার্কার মাকিন দেশে বিশুদ্ধ ধর্ম্মমত প্রচার করিতে এবং কাফ্রিদাসদিগের দাসত্বশৃঙ্খল মুক্ত করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হইয়া মত্যুকে পর্যন্ত অগ্রাহ্য করিয়াছিলেন; চিরস্মরণীয় গ্যালিলিও আপনার বিচারকদিগের সম্মুখে রক্ত মাংসের দুর্ব্বলতাবশতঃ স্বীয় আবিষ্কৃত সতাকে অস্বীকার করিয়া আবার তৎক্ষণাৎ পৃথ্বীতলে পদাঘাত করিয়া বলিলেন, “ইহা এখনও চলিতেছে।” যে