পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/১০

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
বিদ্যাসাগর-জীবনচরিত।

দিতে হইল। দুৰ্গাদেবীর সংসার-নির্ব্বা‌হের উপায়ান্তর ছিল না। তৎকালে বিলাতি সুতার আমদানি হয় নাই; এ প্রদেশের নিরুপায় অনেক স্ত্রীলোকই সুতা প্রস্তুত করিয়া, তাহা বিক্রয় করিয়া কষ্ট্যেস্থষ্টে সংসারযাত্রা নির্ব্বা‌হ করিত। আত্মীয়বর্গের উপদেশানুসারে দুর্গাদেবীও অগত্যা একটি চরকা ক্রয় করিয়া সুতা কাটতেন; কখন কখন আস্‌নাসূতাও কাটিতেন। সুতা বিক্রয় করিয়া যাহা কিছু উপাৰ্জ্জ‌ন হইত, তাহাতেই কষ্টে সংসারযাত্রা নির্ব্বা‌হ করিতেন। এক্ষণে ঠাকুরদাসের বয়ঃক্রম চতুর্দ্দ‌শ বৎসর অতীতপ্রায়; পড়াশুনা অধিক দিন করিলে সংসার চলা দুষ্কর। আত্মীয়বর্গ এই উপদেশ দেন যে, সংস্কৃত অধ্যয়ন বন্ধ করিয়া, যাহাতে শীঘ্র উপাৰ্জন করিতে সক্ষম হন, এরূপ বিদ্যাশিক্ষা করা অত্যাবশ্যক।

 এদিকে রামজয়, তীর্থ স্থানে থাকিয়া স্বপ্ন দেখেন যে, তুমি পরিবারবর্গকে কষ্ট দিয়া তীর্থক্ষেত্রে ভ্রমণ করিতেছ, ইহাতে তোমার অধর্ম্ম হইতেছে। একারণ পাঁচ বৎসরের পর দেশে আগমনপূর্ব্ব‌ক বনমালিপুরে আসিয়া দেখেন যে, সহোদরেরা পৃথক হইয়াছেন, এবং শুনিলেন যে, তাহার পত্নী বীরসিংহায় পিত্রালয়ে অবস্থিতি করিতেছেন; সুতরাং রামজয়, পরিবারবর্গকে আনয়ন করিবার জন্য বীরসিংহায় গমন করিলেন। গৈরিক বসন পরিধান করিয়া, হিন্দুস্থানী সন্ন্যাসীর বেশে শ্বশুরবাটীতে সমুপস্থিত হইলেন। প্রথমতঃ কাহাকেও আত্মপরিচয় না দিয়া, গ্রামের মধ্যে ইতস্ততঃ পরিভ্রমণ করিতে লাগিলেন। তাঁহার কনিষ্ঠা কন্যা অন্নপূর্ণা দেবী, পিতাকে চিনিতে পারিয়া, বাবা বলিয়া উচ্চৈঃস্বরে রোদন করিয়া উঠিলেন। তখন রামজয় আত্মপরিচয় দেন। কয়েক দিবস বীরসিংহায় অবস্থিতি করিয়া, পরিবারগণকে বনমালিপুরে লইয়া যাইবার উদেযাগ করিলেন। কিন্তু তাঁহার পত্নী বনমালিপুরে যাইতে সম্মত হইলেন না। যেহেতু তাহার ভ্রাতৃবর্গ অসদ্ব্যবহার করিয়াছেন; এতাবৎ কালের মধ্যে তাঁহাদের কোন সংবাদ লয়েন নাই; সুতরাং রামজয় অগত্যা বীরসিংহায় পরিবারগণকে রাখিতে বাধ্য হইলেন।