পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/১৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
স্বাধীনাবস্থ।
১৯১

নগদ টাকা দেওয়া হইত। খাতায় নাম লেখা ব্যতীত আরও পঁচিশ ছাব্বিশটী গৃহস্থ, রাত্রিতে গোপনে চাউল, ডাউল ও লবণ লইয়া যাইত। অগ্রজ মহাশয়, খাতায় ইহাদের নাম লিখিতে নিবারণ করিয়া দেন। যে যে ভদ্র-পরিবারের বস্ত্র ছিল না, তাহারা প্রকাশ্যে বস্ত্র লাইতে লজ্জিত হইবে, একারণ প্রায় দুই সহস্র টাকার বস্ত্র গোপনে বিতরণ করেন। সন্ধ্যার পর অগ্রজ মহাশয়, স্বয়ং বগলে বস্ত্রগ্রহণ-পূর্ব্বক মোটাচাদর গাত্রে দিয়া, বস্ত্র বিতরণ করিবার জন্য অনেক পরিবারের বাটীতে গমন করিতেন এবং বলিতেন, “ইহা কাহারও নিকট ব্যক্ত করিবার আবশ্যক নাই।” তিনি ভদ্রলোককে অতি গোপনে দান করিতেন।

 ইতিমধ্যে গড়বেতার অন্নসত্রের কর্ম্মাধ্যক্ষ বাবু হেমচন্দ্র কর ও তাঁহার ভ্রাতৃগণ সাহায্য-প্রার্থনায় অগ্রজ মহাশয়কে পত্র লেখায়, অগ্রজ মহাশয় আমার দ্বারা দরিদ্রভোজনের জন্য ৫০৲ টাকা আর উহাদের বস্ত্রের জন্য ৫০৲ টাকা একুনে ১০০৲ টাকা প্রেরণ করেন। এতদ্ব্যতীত ঐ সময় কোন কোন ভদ্রলোক, পিতৃহীন অবস্থায় যাচ্ঞা করিতে আইসেন, তাহাদের মধ্যে কাহাকেও ৫০৲ টাকা, কাহাকেও ১০০৲ টাকা, কাহাকেও ২০০৲ টাকা দান করেন। ২৮শে শ্রাবণ পৃথক্ বাটীতে অন্নসত্র স্থাপিত হয়, ১লা পৌষ ভোজনের পর অন্নসত্র বন্ধ করা হইয়াছিল। কিন্তু বিদেশীয় নিরুপায়গণ ৮ই পৌষ পর্যন্ত অন্নসত্রগৃহে উপস্থিত ছিল; একারণ, দুর্ব্বল নিরুপায় প্রায় ৬০ জনকে কয়েক দিন ভোজন করাইতে হইয়াছিল। অন্নসত্র শেষ হইলে, কর্ম্মচারী, পরিচারক, পরিচারিকা ও দ্বারবান প্রভৃতি সকলকে রীতিমত বেতন দেওয়া হইয়াছিল। ভালরূপ পরিশ্রম করায়, তাহাদিগকে পুরস্কারও দেওয়া হয়। বিদ্যালয়ে যে সকল ব্রাহ্মণের বালক পরিবেষ্ট ছিল, তন্মধ্যে যাহারা নিতান্ত দরিদ্র, তাহাদিগকেও সন্তুষ্ট করিতে ক্ষান্ত হন নাই।