পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/২০৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
স্বাধীনাবস্থা।
২০১

কিনিয়া ভাত রাঁধিয়া খাইব। কল্য পুনরায় বন্দীপুরের হাটে যাইয়া সাত পয়সার আম কিনিব; সেই আম এখানে বিক্রয় করিলে চৌদ্দ পয়সা হইবে, তাহা হইলে সেই পয়সায় এক পয়সার পোনা-মাছ কিনিয়া খাইব। বালকের মুখে এই সকল কথা শুনিয়া, উহাকে সঙ্গে করিয়া বীরসিংহায় আনয়ন করেন। কয়েক দিন বাটীতে রাখিয়া, একটী ডালি দোকান করিবার উপযুক্ত টাকা দিয়া বিদায় করেন। এইরূপ উচালনের নফরকেও দোকান করিবার মূলধন প্রদান করেন। বিধবা হতভাগিনী স্ত্রীলোক, নাবালক সন্ততি সহিত আসিয়া সম্মুখে উপস্থিত হইলেই, তাহাদের প্রতি তাঁহার কারুণ্যরসের উদ্রেক হইত। অনাথা স্ত্রীলোকের প্রতি কখন তাঁহাকে বিরক্ত হইতে দেখি নাই। তিনি যতবার বাটী আসিতেন, প্রত্যেক বারেই উদয়গঞ্জের গঙ্গাধর দত্তের দোকান হইতে অন্ততঃ ৫০০৲ শত টাকার বস্ত্র আনাইয়া, অনাথ স্ত্রীলোক দেখিলেই তাহাদিগকে প্রদান করিতেন। উদয়গঞ্জের গঙ্গাধর দত্ত, অগ্রজ মহাশয়কে বস্ত্র বিক্রয় করিয়া সঙ্গতি করিয়াছিলেন।

 এক সময় অগ্রজ মহাশয়, বাটী হইতে বৰ্দ্ধমান-গমনকালে সোজা পথে নামিয়া, কামারপুখুর হইতে এক আত্মীয়ের ভবনে গমন করেন। তথায় রাত্রি যাপন করিয়া প্রাতঃকালে দেখিলেন, তাঁহাদিগের বাটীর অবস্থা ভাল নয়; একারণ, তাঁহাদিগকে বলিলেন, “তোমরা বাটীর অবস্থার উন্নতি কর, আমি ইহার জন্য টাকা দিব।” এই বলিয়া বৰ্দ্ধমান গমন করিলেন। তথায় উপস্থিত হইয়া, আমায় ঐ টাকা পাঠাইবার আদেশ করেন এবং এ বিষয় কাহারও নিকট ব্যক্ত করিতে নিষেধ করিয়া পত্র লিখেন।

 পোলপাতুলের হরকালী চৌধুরী, প্রায় ২৫ বৎসর কাল কলিকাতায় আমাদের বাসায় পাকাদিকার্য্য সমাধা করিয়া, স্বীয় সংসার-প্রতিপালন করিয়া আসিতেছিলেন। উক্ত হরকালী, বৰ্দ্ধমানের বাসাতেও পাক করিতেন। বৰ্দ্ধমানে অনাথ স্ত্রীলোকগণ সর্বদা যাচ্ঞা করিতে আসিত। দাদা তাহাদের প্রতি দয়া করিয়া কাহাকেও বস্ত্র, কাহাকেও টাকা প্রদান করিতেন।