পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/২১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২১২
বিদ্যাসাগর-জীবনচরিত।

প্রকাশ করায়, অল্প দিনের মধ্যেই যথেষ্ট টাকা প্যারীবাবুর নিকট জমা হইল। ঐ সময় দাদা বাটী হইতে কলিকাতা আইসেন। তিনি এই বৃত্তান্ত অবগত হইয়া অতিশয় ক্রুদ্ধ হইয়া, পত্রের দ্বারা সংবাদপত্রে প্রকাশ করেন যে, হে বন্ধুগণ! তোমরা আমায় রক্ষা কর, আমি কাহারও সাহায্য গ্রহণ করিব না। যিনি যাহা আমার উদ্দেশে প্যারীবাবুর নিকট প্রেরণ করিয়াছেন, তিনি তাহা অবিলম্বে ফেরৎ লইবেন। আমার ঋণ আমিই পরিশোধ করিব। আমার ঋণের জন্য তোমাদিগকে কোন চিন্তা করিতে হইবে না। পূর্ব্বাপেক্ষা আমার ঋণ অনেক কমিয়াছে; যাহা অবশিষ্ট আছে, আমিই শোধ করিতে পারিব। দেখ, বিদ্যাসাগরের তুল্য নিঃস্বার্থ নির্লোভ লোক প্রায় দৃষ্টিগোচর হয় নাই।

 সন ১২৭৬ সালের আষাঢ় মাসে বীরসিংহায় একটী বিধবা ব্রাহ্মণকন্যার পাণিগ্রহণ-কার্য্য সমাধা হয়। বর শ্রীমুচিরাম বন্দ্যোপাধ্যায়, নিবাস ক্ষীরপাই; তৎকালে বর কেঁচকাপুর স্কুলের হেড্ পণ্ডিতের পদে নিযুক্ত ছিলেন। কন্যা শ্রীমতী মনোমোহিনী দেবী, নিবাস কাশীগঞ্জ। অগ্রজ মহাশয় বাটী আগমন করিলে পর, ক্ষীরপাই গ্রামের সম্ভ্রান্ত লোক হালদার মহাশয়েরা অগ্রজের নিকট আসিয়া বলেন যে, মুচিরাম বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের ভিক্ষাপুত্র, ইনি বিধবাবিবাহ করিলে আমরা অতিশয় দুঃখিত হইব। হালদার বাবুরা অতি কাতরতা পূর্ব্বক বলিলে, দাদা তাঁহাদিগকে উত্তর করেন, “আপনাদের অনুরোধে আমি এই বিবাহের কোন সংস্রবে থাকিব না। আপনারা উভয়কে উপদেশপ্রদানপূর্বক সমভিব্যাহারে লইয়া যান। উহারা উভয়ে স্বতঃপ্রবৃত্ত হইয়া কলিকাতা গিয়াছিলেন; তথা হইতে আসিয়া এখানে যে রহিয়াছেন, তাহা আমি জানিতাম না; শম্ভুর নিকট শুনিলাম, ইহারা কলিকাতায় গিয়া নারায়ণের পত্র লইয়া এখানে আসিয়া, শম্ভু কে ঐ পত্র দিয়াছেন। তাহাতেই সে ইহাদিগকে বাটীতে রাখিয়া, ইহাদের বিবাহের উদ্যোগ পাইতেছে। অদ্য আপনাদের সম্মুখেই বিদায় করা হইবে।” কিয়ৎক্ষণ পরে উহারা বাটী হইতে বহিষ্কৃত হইল বটে, কিন্তু উহারা হালদারদের অবাধ্য হইল। বীরসিংহাস্থ কয়েকজন