পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/২২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২২০
বিদ্যাসাগর-জীবনচরিত।

করিতে লাগিলেন। কাশীর মদনপুরা বাঙ্গালী-টোলার মাতঙ্গীপদ ভট্টাচার্য্যের বাটী অতি সঙ্কীর্ণ ও জঘন্য স্থান; তজ্জন্য অগ্রজ মহাশয় সোণারপুরস্থিত সোমদত্তের একটি প্রশস্ত বাটী ভাড়া করিলেন। মাতঙ্গীপদ ভট্টাচার্য্য দেখিলেন, ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায় আমার বাটী পরিত্যাগ করিবেন; ইহাঁর পুত্র বিদ্যাসাগর অন্য বাটী ভাড়া করিলেন। আমার বাটী পরিত্যাগ করিলে, আর বিদ্যাসাগরের পিতার নিকট পূর্ব্বের ন্যায় প্রাপ্তির আশা রহিল না। ইহা দেখিয়া মাতঙ্গীপাদ, পিতৃদেবকে অনেক উপদেশ দিতে আরম্ভ করিলেন। পিতৃদেব, কাশীতে প্রাতঃকাল হইতে সমস্ত দিবস কেদারঘাটে জপতপ সমাপনান্তে, দেবালয় পর্য্যবেক্ষণপূর্ব্বক সন্ধ্যার সময়ে বাসায় আগমন করিয়া, পাকাদিকার্য্য সম্পন্ন করিতেন। গৃহস্বামী মাতঙ্গীপদ ও তাঁহার পত্নী, সমস্তই আত্মসাৎ করিত। পৌরহিত্য-কার্য্য-কলাপের সময়, পুরোহিত মাতঙ্গীপদ, হস্তে কুশ দিয়া, কৌশল-ক্রমে স্বর্ণ-মোহর দক্ষিণ লইয়া ক্রমশঃ যথেষ্ট স্বর্ণালঙ্কার প্রস্তুত করিয়াছিলেন। সর্ব্বদা নানাপ্রকার ক্রিয়া করাইয়া, তিনি বিস্তর উপায় করিতেন; কিন্তু স্বতন্ত্র বাটীতে বাসা করিলে, এরূপ বশীভুত করিয়া গ্রহণ করিতে পারিবেন না; এজন্য উক্ত পুরোহিত, পিতৃদেবকে নির্জ্জনে বিস্তর উপদেশ দিয়া বলেন, “তোমার পত্নী ও পুত্রগণ বাটী প্রস্থান করুন। তীর্থ-স্থানে স্ত্রী-পুত্র লইয়া গৃহী হইয়া অবস্থিতি করা অতি অকর্ত্তব্য। তুমি আমার বাটীতে নিশ্চিন্ত হইয়া যেমন অবস্থিতি করিতেছ, সেইরূপই থাক। তোমার পুত্রগণ নাস্তিক, উহাদের সংস্রবে থাকা উচিত নয়।” পিতৃদেব, পুরোহিতকে উত্তর করিলেন, “আমার পুত্র ঈশ্বর আমায় যথেষ্ট শ্রদ্ধা ও ভক্তি করিয়া থাকে। সেই সৎপুত্র আমার কষ্ট দেখিয়া, পৃথক্ প্রশস্ত বাটীতে আমায় লইয়া গেলে যদি সন্তুষ্ট হয়, আমার তাহাই করা কর্ত্তব্য। এক্ষণে আমি বৃদ্ধ হইয়াছি, উপযুক্ত পুত্রের কথা রক্ষা করা আমার অবশ্য কর্ত্তব্য।” ইহা বলিয়া, পুরোহিত ও তৎপত্নীর উপদেশে কর্ণপাত না করিয়া, অগ্রজ মহাশয়ের সহিত নূতন ভাড়াটিয়া ভবনে গমন করিলেন।