পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/২৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৪২
বিদ্যাসাগর-জীবনচরিত।

হইল চুরি গিয়াছে, আর পাওয়া যায় নাই।” ইহা শুনিয়া রাজকুমার বলিলেন, “আপনার ঘড়ীর সদৃশ একটি ঘড়ী লালমোহন বাবুর পুত্র, পাইকপাড়ার একটি মুদীর নিকট ২০৲ টাকায় বন্ধক দিয়াছেন। ঐ মুদী, ঘড়ীটি আমাকে দেখাইতে আসিয়াছিল; আমি তাহাকে বলিয়াছি যে, “বিদ্যাসাগর মহাশয়ের এই ঘড়ী, ইহা কেমন করিয়া তোমার হস্তগত হইল?” সে বলিল, “ইহা লালমোহন বাবুর পুত্র আমাকে দিয়াছেন।” ইহা শুনিয়া অগ্রজ মহাশয় নিস্তব্ধ হইয়া রহিলেন। উপস্থিত অন্যান্য লোক বলিলেন, “অমন ছোকরাকে পুলিশে ধরাইয়া দেওয়া উচিত।” তাহাতে দাদা বলিলেন, “উহার মাতামহ আমাদের অনেক উপকার করিয়াছেন; এক্ষণে তাঁহার দৌহিত্রের এই সামান্য অপরাধ আমার ব্যক্ত করা উচিত নয়।” তৎক্ষণাৎ রাজপুত্রের সহিত পাইকপাড়া যাইয়া, সেই মুদীকে ২০৲ টাকা ও কিছু সুদ দিয়া ঘড়ীটি মুক্ত করেন। অনন্তর সেই বালককে সমভিব্যাহারে আনিয়া বলিলেন, “তোমার মাতামহের অনেক খাইয়াছি এবং বাল্যকালে তাঁহারা আমার অনেক দৌরাত্ম্য সহ করিয়াছেন। তোমার যখন যাহা আবশ্যক হইবে, তাহা তুমি আমাকে জানাইলে পাইবে। ক্ষণকালের জন্য আমি কখন কোন কারণে তোমাদের প্রতি বিরক্ত হইব না।” ইহা শুনিয়া উপস্থিত ভদ্র ও সম্ভ্রান্ত লোকেরা আশ্চর্য্যান্বিত হইলেন।

 সন ১২৮৫ সালে দাদার আত্মীয় জনকয়েক ব্যক্তি, দাদার পত্র লইয়া পথে ষড়যন্ত্র করিয়া বীরসিংহায় পঁহুছিয়া, বীরসিংহার দাতব্য ডাক্তারখানার চিকিৎসক বাবু শ্রীরামচন্দ্র মুখোপাধ্যায়কে দাদার পত্রাদি দেখাইলেন। ডাক্তারবাবু, ষড়যন্ত্রে পতিত হইবার ভয়ে বলিলেন, “আমি ওরূপ কার্য্য করিতে অক্ষম।” এই বলিয়া তিনি কলিকাতায় আগমনপূর্ব্বক, দাদার নিকট সমুদয় ষড়যন্ত্রের বিষয় জ্ঞাত করিয়া, পদ পরিত্যাগ করিলেন। দাদা, এই সমস্ত বিষয় পর্য্যালোচনা করিয়া ডাক্তারখানা বন্ধ করিলেন, এবং তৎকালে উপস্থিত ডাক্তার-খানার সমস্ত দ্রব্য উক্ত ডাক্তার মহাশয়কে প্রদান করিলেন।

 ১৮৪৬ খৃঃ অব্দের শেষে পাঠ্যাবস্থা শেষ করিয়া সংস্কৃত-কলেজ পরিত্যাগ