মহাশয় আমায় নূতন কিছুই শিখান নাই, যাহা দেশে শিখিয়াছি, এখানেও সেই সেই বিষয় বলিয়া দিয়া থাকেন। অতএব যাঁহার নিকট নূতন বিষয় শিখিতে পারি, আমাকে সেইরূপ গুরুমহাশয়ের নিকট নিযুক্ত করুন, নচেৎ বিদেশে থাকিবার আবশ্যক কি?” ইহার কয়েক দিন পরে, অগ্রজ মহাশয় উদরাময়ে আক্রান্ত হইয়া, সর্ব্বদা অসাবধান হইয়া শয্যায় মলমূত্র ত্যাগ করিতে লাগিলেন। অন্য কেহ অভিভাবক না থাকায়, পিতৃদেবকেই ঐ বিষ্ঠা স্বহস্তে পরিষ্কার করিতে হইত। এক এক দিন এরূপ হইত যে, সিঁড়িতে মলত্যাগ করিলে, সমস্ত সিঁড়িতে তরল মল গড়াইয়া পড়িত। পিতৃদেব স্বহস্তে ঐ বিষ্ঠা পরিষ্কার করিতেন। ত্বৎকালে যদিও অগ্রজ মহাশয় বালক ছিলেন, তথাপি মনে করিতেন যে, বাবা এত কেন করেন। কয়েক দিন পরে পিতামহী, পৌত্রের এরূপ পীড়ার সংবাদ পাইয়া, অনতিবিলম্বে কলিকাতায় যাইয়া, তথা হইতে পৌত্রকে দেশে আনয়ন করিলেন। দেশে তিন চারি মাস অবস্থিতি করিয়া, রোগ হইতে মুক্ত হইলেন। পুনর্ব্বার জ্যৈষ্ঠমাসে পিতৃদেব দেশে আসিয়া, দাদাকে সমভিব্যাহারে লইয়া কলিকাতা যাত্রা করিলেন। ঐ সময় অগ্রজকে পিতৃদেব জিজ্ঞাসা করিলেন, “কেমন ঈশ্বর! এবার বরাবর বাট হইতে কলিকাতায় চলিয়া যাইতে পরিবে কি না? যদি চলিতে না পার, তাহা হইলে একজন লোক সঙ্গে লইব। সে মধ্যে মধ্যে তোমাকে কোলে করিবে।” তাহাতে দাদা উত্তর করিলেন যে, “এবার চলিয়া যাইতে পারিব; সঙ্গে লোক লইবার আবশ্যক নাই।” পরদিন রবিবার প্রাতে ভোজনান্তে পিতার সহিত ছয় ক্রোশ পথ গমন করিয়া, পাতুলগ্রামে রাধামোহন বিদ্যাভুষণের ভবনে অবস্থিতি করিলেন। তৎপরদিবস তথা হইতে প্রায় আট ক্রোশ অন্তরস্থিত তারকেশ্বরের সন্নিহিত রামনগর গ্রামে কনিষ্ঠা পিতৃঘসার বাটী যাত্রা করিলেন। রাজবলহাটের দোকানে উপস্থিত হইয়া উভয়ে ফলাহার করিলেন। তথা হইতে উঠিবার সময় দাদা বলিলেন, “বাবা, আমি আর চলিতে পারিব না।” পিতা কতই বুঝাইলেন; তাহাতে দাদা বলিলেন,
পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/২৬
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২২
বিদ্যাসাগর-জীবনচরিত।