পাতা:বিদ্যাসাগর (বিহারীলাল সরকার).pdf/১০২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কবি-প্রতিভা।
৭৩

শয়ন করিবার আদেশ পাইয়াছিলেন। তখন তাহার তৃতীয় ভ্রাতা শম্ভুচন্দ্র কলিকাতায় থাকিতেন। ভ্রাতা তাঁহার শয্যায় শয়ন করিতেন। বালক বিদ্যাসাগর পাঠাভ্যাস করিয়া অধিক রজনীতে শয়ন করিতেন। এক দিন ভ্রাতা বিছানায় মলত্যাগ করিয়া ফেলিয়াছিলেন। পাছে একথা বলিলে পেটের ব্যারাম হইয়াছে বলিয়া খাইতে না পান, সেই ভয়ে ভ্রাতা মলত্যাগের কথা প্রকাশ করেন নাই | ঈশ্বরচন্দ্র তো তাহা জানিতে পারেন নাই। তিনি প্রাতে উঠিয়া দেখেন, তাহার সর্ব্বাঙ্গে বিষ্ঠা। তখন তিনি বিষ্ঠা ধৌত করিয়া স্বহস্তে ভ্রাতার মলমূত্রাদি পরিষ্কার করিয়া দেন। বিদ্যাসাগরের যেমন পিতৃ-মাতৃ-ভক্তি ছিল, তেমনই ভ্রাতৃ-স্নেহ ছিল।

 বালক ঈশ্বরচন্দ্র যখন সাহিত্য-শ্রেণীতে পড়িতেন, তখন তাঁহার উপর এক বেলা রন্ধনের ভার ছিল। রাত্রিকালে পিতা নয়টার সময় বাসায় অসিয়া পাকাদি করিতেন। এত কষ্টে বিদ্যাসাগরের পাঠাভ্যাসে ক্রটি ছিল না। তিনি কলেজে যাইবার সময় পুস্তক খুলিয়া পড়িতে পড়িতে যাইতেন এবং কলেজ হইতে আসিবার সময়ও ঐরূপ করিতেন। চিরকাল তিনি বিলাসে বীতস্পৃহ ছিলেন। সঞ্চয়ে সমর্থ হইয়াও তিনি মোটা কাপড় ও মোট চাদর ব্যবহার করিতেন। বাল্যেও তাঁহার তাহাই ছিল। জননী চরকায় সুতা কাটিয়া, বস্ত্র প্রস্তুত করিয়া, কলিকাতায় পাঠাইতেন। সেই মোটা কাপড় পরিয়া তিনি কলেজে যাইতেন। বিদ্যাভ্যাসে তাঁহার ক্রটির কথা শুনা যায় নাই। দৈবাৎ একটু ক্রটি হইলে পিতা ঠাকুরদাস ভয়ানক শাসন করিতেন। পুত্রও পিতার শাসনকে বড় ভয় করিতেন।

১০