পাতা:বিদ্যাসাগর (বিহারীলাল সরকার).pdf/১১২

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
পরদুঃখমোচন।
৮৩

প্রকাশ, রসগঙ্গাধব প্রভৃতি অলঙ্কার গ্রন্থ পাঠ করেন। অলঙ্কারের বাৎসরিক পরীক্ষায় তিনি সর্ব্বোচ্চ পারিতোষিক প্রাপ্ত হন। তখন পুস্তক ও টাকা পারিতোষিকের ব্যবস্থা ছিল। ঈশ্বরচন্দ্র এই কয়েকখানি পুস্তক পাইয়াছিলেন–রঘুবংশ, সাহিত্যদর্পণ, রত্নাবলী, মালতীমাধব, মুদ্রারাক্ষস, বিক্রমোর্ব্বশী, মৃচ্ছকটীক।

 একদিন পণ্ডিত প্রবর তারানাথ তর্কবাচস্পতি মহাশয়ের বাড়ীতে তাহাকে সাহিত্যদর্পণের আবৃত্তি করিতে দেখিয়া তাৎকালিক বিখ্যাত দর্শনশাস্ত্রবেত্তা জয়নারায়ণ তর্কপঞ্চানন মহাশয় বলিয়াছিলেন,—“এত ছোট ছেলে সাহিত্যদর্পণের এমন সুন্দর আবৃত্তি কল্পিতে পারে, ইহা বড় অশ্চর্য্যের বিষয়।” তর্কপঞ্চানন মহাশয় ঈশ্বরচন্দ্রকে পরীক্ষা করিয়া বলিয়াছিলেন,—“এই বালকের বয়োবৃদ্ধি হইলে, বালক বাঙ্গালা দেশের অদ্বিতীয় লোক হইবে।”

 এই সময় ঈশ্বরচন্দ্র কলেজে মাসিক ৮ আট টাকা বৃত্তি প্রাপ্ত হন।[১] তিনি যাহা বৃত্তি পাইতেন, তাহ পিতাকে আনিয়া দিতেন। পুত্রের প্রথমাবস্থার বৃত্তিলব্ধ টাকায় পিতা ঠাকুরদাস বীরসিংহ গ্রামের নিকট কতকটা জমি ক্রয় করিয়াছিলেন। এই জমিতে তাঁহার টোল বসাইবার সংকল্প ছিল। টোল বসাইয়া ছাত্র রাখিয়া সংস্কৃত শিক্ষার প্রসারবৃদ্ধি করিবেন, পিতার এই সাধ বরাবর ছিল। পুত্রের বিদ্যা-গৌরব-সংবৃদ্ধির সঙ্গে তাহার চিরপোষিত সাধ সংবর্দ্ধিত হইয়াছিল। বিদ্যাসাগর মহাশয়, প্রায়ই বন্ধুবান্ধবের নিকট একথা বলিতেন। বীরসিংহ গ্রামে যখন প্রথমে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হইয়াছিল, তখন বিশুদ্ধ সংস্কৃত শিক্ষাই


  1. এই সময় কলেজে মাসিক পাঁচ টাকা ও আট টাকা বৃত্তির ব্যবস্থা ছিল।