পাতা:বিদ্যাসাগর (বিহারীলাল সরকার).pdf/২১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কলেজের কর্ম্মত্যাগ।
১৮৭

বান্ধব, স্বজন, পরিজন সকলে অবাক হইলেন। কেহ কেহ বলিলেন, বিদ্যাসাগর কার্য্য পরিত্যাগ করিলেন বটে; কিন্তু এত বড় সংসার চালাইবেন কিসে? সত্য সত্য ইহা ঘোরতর অবিমৃষ্যকারিতা; কিন্তু তেজস্বী বিদ্যাসাগর দিগ্বিজয়ী বীরের ন্যায় অচল অটল ভাবে ও অম্লান বদনে উত্তর দিলেন,—“আলু, পটোল বেচিয়া খাইব, মুদীর দোকান করিব, তবুও যে পদে সম্মান নাই, সে পদ লইব না।” এ সময় তাঁহার বাসায় অনেকগুলি অনাথ বালক অন্নবস্ত্র পাইত। তিনি তাহাদের কাহাকেও অন্নবস্ত্রে বঞ্চিত করেন নাই। মধ্যম ভ্রাতা ফোর্ট উইলিয়ম্ কলেজে চাকুরী করিয়া যে পঞ্চাশটা টাকা পাইতেন, তাহাই একমাত্র উপায় ছিল। এই টাকায় বাসাখরচ চলিতে লাগিল। মাসে মাসে পঞ্চাশ টাকা ঋণ করিয়া বাড়ীতে পাঠাইতে হইত। রাজকৃষ্ণ বাবুর নিকট শুনিয়াছি, “পদ পরিত্যাগের পর তাঁহাকে একটা দিনের জন্যও মলিন বা বিষণ্ন দেখা যায় নাই। পূর্ব্বের ন্যায় তিনি তেমনই হিমগিরিবৎ গাম্ভীর্য্যপূর্ণ। মুখ দেখিয়া মনে হইত না, তাঁহার মনে কোন কষ্ট কি দুঃখ আছে।” অনন্যোপায় সামান্যাবস্থাপন্ন ব্যক্তির পক্ষে এরূপ পদত্যাগ দুষ্কর নিশ্চিতই; কিন্তু যাঁহাদের ভিতরে তেজ আছে, যাঁহাদের আত্মশক্তি ও সামর্থ্যের উপর অচল বিশ্বাস আছে, তাঁহাদের পক্ষে ইহা বিচিত্র কিছুই নহে।

 ১৮৪৯ খৃষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসের পূর্ব্ব পর্যন্ত বিদ্যাসাগর মহাশয় কোন চাকুরীতে পুনঃ প্রবৃত্ত হন নাই। এই সময় হিন্দী ও ইংরেজী বিদ্যায় তাঁহার অনেকটা ব্যুৎপত্তি হইয়াছিল। আনন্দকৃষ্ণ বাবু বলিয়াছিলেন,—“তাঁহার মুখে সেক্সপিয়রের আবৃত্তি