পাতা:বিদ্যাসাগর (বিহারীলাল সরকার).pdf/২২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কবি প্রীতি।
১৯৫

এই সময়ে মদনমোহন তর্কালঙ্কার মহাশয়ের সহিত পরামর্শ করিয়া বিদ্যাসাগর মহাশয় “সংস্কৃত-যন্ত্র” প্রতিষ্ঠিত করেন। ৬০০\[১]ছয়শত টাকা ঋণ করিয়া একটী প্রেস ক্রয় করা হয়। এই প্রেসে বিদ্যাসাগর মহাশয় প্রথম ভারতচন্দ্রের গ্রন্থ মুদ্রিত করেন। গ্রন্থের পাণ্ডুলিপি কৃষ্ণনগরের মহারাজার বাড়ী হইতে আনীত হয়। মার্সেল সাহেব ফোর্ট উইলিয়ম্‌ কলেজের জন্য ৬০০\ছয় শত টাকায় এক শত খণ্ড ভারতচন্দ্র ক্রয় করেন। এই টাকায় দেনা শোধ হয়। এই প্রেসে সাহিত্য, ন্যায়, দর্শন প্রভৃতি গ্রন্থ মুদ্রিত হয়। ক্রমে “প্রেসটী” লাভবান্‌ হইতে থাকে।

 ভারতচন্দ্রের গ্রন্থ বিদ্যাসাগর মহাশয়ের বড় প্রিয় ছিল। ভারতচন্দ্রকে তিনি ভক্তি ও শ্রদ্ধা করিতেন। তাঁহার বিশ্বাস, কালিদাস যেমন সংস্কৃতে; ভারতচন্দ্র তেমনই বাঙ্গালায়; কালিদাসের গ্রন্থে যেমন সংস্কৃতের; ভারতচন্দ্রের গ্রন্থে তেমনই বাঙ্গালার পরিপাটী। অন্নদামঙ্গলের পরিমার্জ্জিত ভাষা, বাঙ্গালা ভাষার আদর্শ বলিয়া তাঁহার ধারণা ছিল। তিনি ভাবিতেন, বাঙ্গালার ভারতচন্দ্র খাঁটি বাঙ্গালী কবি। ভারতচন্দ্রের পর দাশরথি রায়, ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত ও রসিকচন্দ্র রায় খাঁটি বাঙ্গালী কবি বলিয়া বিদ্যাসাগর মহাশয়ের প্রীতি-ভাজন ছিলেন। ঈশ্বর-

  1. বিদ্যাসাগর মহাশয় ও মদনমোহন তর্কালঙ্কার মহাশয় উভয়েই এই মুদ্রাযন্ত্রের সমান অংশীদার ছিলেন। অল্প দিনের মধ্যে মদনমোহন তর্কালঙ্কারের সহিত বিদ্যাসাগর মহাশয়ের মতান্তর হয়। বিদ্যাসাগর মহাশয় কোন কারণে তর্কালঙ্কার মহাশয়ের উপর বিরক্ত হইয়া, তাঁহার সহিত সম্পর্ক পরিত্যাগ করিতে প্রয়াসী হন ৺ শ্যামাচরণ বিশ্বাস ও ৺ রাজকৃষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয় সালিসি হইয়া গোল মিটাইয়া দেন। প্রেস বিদ্যাসাগর মহাশয়ের সম্পত্তি হয়।