পাতা:বিদ্যাসাগর (বিহারীলাল সরকার).pdf/৩৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিধবা-বিবাহ।
৩০৯

প্রকৃত হিন্দু-সন্তানকে কর্ণে হস্তক্ষেপ করিতে হয়। ওয়ার্ড সাহেবের নজীর তুলিয়া গ্রাণ্ট সাহেব বলিয়াছিলেন,—“The young widows, being forbidden to marry, almost without exception, become prostitutes” অর্থাৎ হিন্দু-বাল-বিধবারা প্রায়ই বেশ্যা হয়। শিব। শিব!

 এই গ্রাণ্ট সাহেবই বলিয়াছেন,—“The Hindu practice of Brahmacharjia was an attempt to struggle against nature and like all other attempts to struggle against nature was entirely unsuccessful.” অর্থাত ব্রহ্মচর্য প্রকৃতির বিরুদ্ধ। এ প্রকৃতিরবিরুদ্ধ-ব্রহ্মচর্যাপালনে হিন্দু অকৃতকার্য্য়। এই কি প্রকৃত কথা?

 এই গ্রাণ্ট সাহেব বলিয়াছিলেন,—“৩।৪ তিন চারি শত বৎসর পূর্ব্বে পণ্ডিত রঘুনন্দন আপনার বিধবা কন্যার বিবাহ দিবার উদ্যোগ করিয়াছিলেন।এই রঘুনন্দনের ধর্ম্ম-শাস্ত্রসংগ্রহমতে সমস্ত বঙ্গ পরিচালিত।”

 যে রঘুনন্দন বিধবা-বিবাহের পক্ষসমর্থন করেন নাই, তিনি আপন বিধবা কন্যার বিবাহ দিতে উদ্যোগী হইয়াছিলেন, গ্রাণ্ট সাহেব এসব কথা কোথায় পাইলেন, তাহার নির্ণয় নাই। হিন্দু-সমাজ অবশ্য এ কথা বিশ্বাস করিবে না।[১]

  1. এই প্রবাদ আছে, একদিন গঙ্গাতীরে আহ্নিক করিতে করিতে রঘুনন্দনের সহসা কাছা খুলিয়া গিয়াছিল। অন্যান্য ব্রাহ্মণেরা তাঁহার কাছা খোলা দেখিয়া মনে করেন, যখন রঘুনন্দনের কাছা খোলা, তখন আমাদেরও খুলিতে হইবে। সকলেই কাছা খুলিলেন। রঘুনন্দন সকলেরই কাছা খোলা দেখিয়া একটু বিস্মিত হইয়াছিলেন; কিন্তু যখন তিনি দেখিলেন, তাঁহার কাছা খোলা, তখন তিনি বুঝলেন, তাঁহার কাছা খোলা দেখিয়া সকলে কাছা খুলিয়াছেন। অধিকন্তু তিনি বুঝিলেন, সমাজের উপর তাঁহার অসীম প্রভাব। সমাজের উপয় রঘুনন্দনের যে অসীম প্রাদুর্ভাব হিল, তাহাতে সন্দেহ নাই। এ হেন রঘুনন্দন ইচ্ছা করিলে কি আপন বিধবা কন্য়ার পুনর্ব্বিবাহ দিতে পারিতেন না?