ইনি বলিয়াছিলেন,—“এমন অনুরোধ করিবেন না। এখন আমি সম্পাদক। আমি যদি সাহেব সুবোকে অনুরোধ করি, তাহা হইলে, স্বাধীনভাবে আর লেখা চলিবে না।” বিদ্যাসাগর মহাশয়, এই কথা শুনিয়া, চলিয়া আসেন। তিনি যখন অনুরোধ করিতেছিলেন, সেই সময় তথায় কোন সওদাগর আফিসের সদর-মেট তথায় উপস্থিত ছিলেন। বিদ্যাসাগর মহাশয়, চলিয়া আসিলে সেই সদর-মেট বাবুটাও, তাঁহার সঙ্গে চলিয়া আসেন। তিনি পথিমধ্যে অতি বিনয়-বাক্যে বিদ্যাসাগর মহাশয়কে বলেন, “মহাশয়! লোকটীর ২০ (কুড়ি) টাকা মাহিনার চাকুরী হইলে চলিবে কি? তাহা যদি হয়, আমার অধীনে একটী চাকুরী খালি আছে। আমি তাহা আপনার লোককে দিতে পারি।”
সদর-মেটের সৌজন্যে বিদ্যাসাগর বিস্মিত হইয়া উপকৃতর অকৃতজ্ঞতা স্মরণে একটু হাস্য করিলেন। তিনি সদর-মেটের মহত্ত্বের প্রশংসা করিয়া, তাঁহারই কথা-মত আপনার লোকটিকে তাঁহারই আফিসে পাঠাইতে সম্মত হয়েন।
এরূপ অকৃতজ্ঞতার বহু প্রমাণ পাওয়া যায়। কেহ নিন্দা করিয়াছেন শুনিলে, বিদ্যাসাগর মহাশয় বলিতেন,—“সে কি রে, আমার নিন্দা? আমি তো তাহার কোন উপকার করি নাই।”
তিনি প্রায়ই বলিতেন,—“তিনি যাহার যত উপকার করিয়াছেন, তাঁহার নিকট তত অধিক প্রত্যুপকার প্রাপ্ত হইয়াছেন।”[১]
উপকারীর প্রত্যুপকার তো দূরের কথা উপকারীর অপকার করার দৃষ্টান্ত— এ কলুষময় কলিকালে চারিদিকে দেদীপ্যমান![২]