পাতা:বিদ্যাসাগর (বিহারীলাল সরকার).pdf/৪০৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৺রমাপ্রসাদ রায়।
৩৭৩

 বিদ্যাসাগর মহাশয় যেমন দীন-বৎসল, তেমনই সন্ত্রান্ত ধনাঢ্য ব্যক্তিবর্গেরও সহায় ও সুহৃদ্ ছিলেন। কাহারও নিকটে তিনি একটা পয়সারও প্রত্যাশা করিতেন না; কিন্তু সকলেরই উপকারার্থ তিনি দেহ-প্রাণ উৎসর্গ করিতে কুণ্ঠিত হইতেন না। এমন কি, অনেক সময়ে বিপম্ন ধনকুবেরকুলেরও বিপদুদ্ধারার্থ তিনি অকাতরে নিজের অর্থব্যয় করিতেন। তিনি অবিশ্রান্ত স্বেদভারে কখন মুহূর্ত্তের জন্যও কাতর হইতেন না। আবার কাহারও কোনরূপ কর্তব্যত্রুটি দেখিলে, অথবা কারও দ্বারা কোনরূপে আত্মসম্ভ্রমের অমর্য্যাদা দেখিলে, তিনি তদ্দণ্ডেই বজ্রাদপি কঠোর হৃদয়ে কুবেরসম কোটিপতি সুহৃদেরও সুদৃঢ় সৌহাদ্দ-স্নেহবন্ধন ছিন্ন করিয়া ফেলিতেন। ঘৃণায় আর তাঁহার প্রতি মুখঃতুলিয়াও চাহিয়া দেখিতেন না। তখন রাজকুলেরও সেই সৌধ হর্ম্ম্যাবলী তাঁহার চক্ষে ভীষণ নরকরূপে প্রতীয়মান হইত। যেমন বাহিরে, তেমনই ঘরে। স্বভাব-স্নেহে আত্মীয়-স্বজন ও সুহৃদ-সন্তানের প্রতি যেমন ক্ষীরধারার অনন্ত স্রোত ছুটিত, আবার কাহারও কাহারও কর্ত্তব্যত্রুটি দেখিলে, তেমনই দারুণ মনঃক্ষোভে তাঁহার সহস্র সূর্য্যের সুতীক্ষ্ণ জ্বালাময় তীব্র তাপ ফুটিয়া উঠিত। প্রকৃতই বিদ্যাসাগরের হৃদয় “বজ্রাদপি কঠোরাণি মৃদুণি কুসুমাদপি।”

 ১২৬৯ সালে বা ১৮৬২ খৃষ্টাব্দে ৺রাজা রামমোহন রায়ের কনিষ্ঠ পুত্র হাইকোর্টের প্রসিদ্ধ উকিল রমাপ্রসাদ রায়ের দেহান্তর হয়। রমাপ্রসাদ বাবু হাইকোর্টের বিচারপতি-পদে অধিষ্ঠিত হইবার আজ্ঞাপত্র পাইয়াছিলেন; তাঁহাকে হাইকোর্টের সেই পবিত্র আসনোপবেশনসুখ সম্ভোগ করিতে হয় নাই। রমাপ্রসাদ রায়ের সহিত বিদ্যাসাগরের প্রগাঢ় সখ্য ছিল; কিন্তু বিধবা-বিবা-