সকলেরই সকল বিষয়ে কষ্ট হয়। ইতিপূর্বে ভগিনীদ্বয়ের পৃথক্ বাটী নির্ম্মাণ করিয়া দেওয়া হইয়াছিল। বিদেশীয় যে সকল বালক বাটীতে ভোজন করিয়া বীরসিংহ বিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করিত, তাহাদের মাসিক ব্যয়নির্ব্বাহের জন্য সমস্ত টাকা দিয়া পাচক ও চাকর দ্বারা স্বতন্ত্র বন্দোবস্ত করেন। ইহার কিছু দিন পরে তাঁহার পুত্র নারায়ণের পৃথক বাটী প্রস্তুত হয়। এবং নিজের নিকট জননীদেবীর অবস্থিতি করিবার ব্যবস্থা হইল।[১]
এই ব্যবস্থায় হিন্দুর একান্নভুক্ত পরিবার প্রথার বিরোধ প্রমাণ। বিদ্যাসাগর মহাশয় একান্নভুক্ত পরিবার প্রথার পক্ষপাতী ছিলেন না। ইহা তাঁহার দোষ নহে, দোষ তাঁহার শিক্ষার। হিন্দুধর্ম্মের অন্তস্তলে প্রবেশ করিবার অধিকার তাঁহার ছিল না; হিন্দুসমাজের গঠনের মূল-তত্ত্বে এই জন্য তিনি লক্ষ্য করিতে সমর্থ হইতেন না। তিনি হিন্দুর যে সামাজিক কার্য্যে হস্তক্ষেপ করিয়াছেন, তাহাতে ইহার পরিচয় পাওয়া যায়। এই একান্নভুক্ত পরিবারপ্রথার বিরুদ্ধাচরণ করাও সেই বিষয়ের পরিচয় দিতেছে। হিন্দুর সংসারে, সমাজে, অনেক সময় ব্যবহারিক সকল বিষয়ে পরমার্থতত্ত্বলাভের পরিচয় পাওয়া যায়। প্রকট ভাবে অন্তস্তত্ত্ব বুঝাইবার নিমিত্ত হিন্দুর বাহ্য ব্যবহারের সৃষ্টি। একান্নভুক্ত-পরিবার প্রথা হিন্দুসমাজ-গঠনে একটা প্রধান অঙ্গ—হিন্দুর যোগ-সাধনে-মোক্ষ-প্রাপ্তির প্রধান পথ। এক অপরের সহিত যুক্ত হইলে যোগ হয়। সমস্ত জগতের সহিত মিশিয়া যাওয়া, আপনাতে
- ↑ বিদ্যারত্ন মহাশয় এই কথা লিখিয়াছেন। নারায়ণ বাবুকে জিজ্ঞাসা করিয়া জানিলাম, সবই সত্য; তবে কলহের সম্ভাবনা নহে, সত্য সত্যই কলহ ঘটিয়াছিল।