পাতা:বিদ্যাসাগর (বিহারীলাল সরকার).pdf/৫২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
হিন্দু-উইল।
৪৮৭

 ১২৭৭ সালের ১৭ই ভাদ্র বা ১৮৭০ খৃষ্টাব্দের ১লা সেপ্টেম্বর, “হিন্দু উইলস আক্ট” পাস হয়। ১৮৬৯ সালে ইহার পাণ্ডুলিপি “পেশ” হইয়াছিল। ইহার পূর্বে “ইণ্ডিয়ান সাক্‌সেন্” নামক আইনে কার্য্য চলিত; সে আইন কেবল সাহেবদের জন্য। তাহারই কতকগুলি ধারা পরিবর্ত্তন করিয়া, হিন্দু, বৌদ্ধ ও জৈনদের জন্য “হিন্দু উইলস্ আক্ট” হয়। পূর্ব্বে সুপ্রিমকোর্ট হওয়ার পর কলিকাতায় ধনাঢ্যমণ্ডী আপনাদের স্বেচ্ছামতে উইল করিয়া যাইতেন। ক্রমে বিচারে প্রকাশ পায়, এইরূপ উইলে নানারূপ অসুবিধা ও জুয়াচুরি ঘটে। এতন্নিবারণ উদ্দেশে এই বিলের সৃষ্টি। এই বিল লইয়া তুমুল আন্দোলন হইয়াছিল।

 গবর্ণমেণ্ট হইতে এ বিষয়ে যাবতীয় গণ্যমান্য ও হিন্দুশাস্ত্রজ্ঞ পণ্ডিতগণের মত গ্রহণ করা হয়। বিদ্যাসাগর মহাশয়ও উক্ত আইন সম্বন্ধে স্বীয় মত প্রদান করিতে আহুত হইয়াছিলেন। তিনি আইনের মর্ম্ম বিশেষরূপে পর্য্যালোচনা করিয়া দুইটি বিষয় সমর্থন করেন নাই। প্রথমতঃ হিন্দুশাস্ত্রানুসারে অজ্ঞাত কোন ব্যক্তিকে দান করিলে তাহা বৈধ হয় না। গ্রহীতার ও দাতার জীবদ্দশায় বর্ত্তমান থাকা ও বোধবিশিষ্ট হওয়া চাই। কিন্তু উক্ত আইনে এ প্রকার দান কোন কোন স্থলে বৈধ বলিয়া গৃহীত হইয়াছে। দ্বিতীয়তঃ উক্ত আইনে যাহাকে “Rules against perpetuity” অর্থাৎ “আবহমানকাল স্বত্বাধিকার বিরুদ্ধ বিল” বলে, তাহাও হিন্দু আইনসম্মত নহে বলিয়া বিদ্যাসাগর মহাশয় মত প্রকাশ কবেন। শাসনকর্ত্তারা উক্ত আপত্তিতে কর্ণপাত করেন নাই। তাঁহার যুক্তিপূর্ণ আপত্তি অগ্রাহ্য করিয়া তাঁহারা উক্ত আইন বিধিবদ্ধ করেন।