পাতা:বিদ্যাসাগর (বিহারীলাল সরকার).pdf/৫২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৮৮
বিদ্যাসাগর।

 ১২৭৭ সালের ৯ই কার্তিক বা ১৮৭০ খ্রীষ্টাব্দের ২৫শে অক্টোবর নবদ্বীপের মহারাজ সতীশচন্দ্র বাহাদুরের মৃত্যু হয়। নবদ্বীপ রাজবংশের সহিত বিদ্যাসাগর মহাশয়ের ঘনিষ্ঠ সংস্রব ছিল। সতীশচন্দ্রের পিতা মহারাজ শ্রীশচন্দ্র বাহাদুরের সঙ্গে ভারতচন্দ্র প্রণীত গ্রন্থসংগ্রহ এবং কৃষ্ণনগর-স্কুলের পরিদর্শনসূত্রে এই সংস্রবের সূত্রপাত হয়। মহারাজ শ্রীশচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়ের গুণগ্রামে বিমুগ্ধ হইয়া তাঁহাকে সুদৃঢ় সখ্যশৃঙ্খলে আবদ্ধ করিয়াছিলেন। কোথায় সেই বাঙ্গালীর সর্বজ্জন-পূজ্য ও সর্ব্ব-সাধারণ-মান্য ব্রাহ্মণ কুল-প্রদীপ রাজ্যেশ্বর মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের বংশতিলক মহারাজ শ্রীশচন্দ্র, আর কোথায় পরসেবী দীন হীন ব্রাহ্মণ ঠাকুরদাসের বংশধর গৃহস্থ বিদ্যাসাগর। বিদ্যাসাগরের সহিত সাক্ষাৎ হইবামাত্র মহারাজ শ্রীশচন্দ্র রত্নসিংহাসন পরিত্যাগ করিয়া, পুলক-প্রীতিভরে সেই বেশভূষাহীন দরিদ্র-বেশধারী, ব্রাহ্মণকে প্রেমালিঙ্গন দিতে কিঞ্চিৎমাত্রও কুণ্ঠিত হইতেন না। এত অনুরাগ কিসের? এমন কি, মহারাজ শ্রীশচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়ের ধর্ম্ম-বিগর্হিত বিধবাবিবাহকাণ্ডেও সহায়তা করিতে পশ্চাৎপদ হন। নাই।[১] বিধবা-বিবাহের আইনসম্বন্ধে আবেদন পত্রে মহারাজ শ্রীশচন্দ্র স্বাক্ষর করিয়াছেন। প্রথম বিধবা-বিবাহের দিনে তাঁহার


  1. কেহ কেহ বলেন, পরাশরের যে বচন অবলম্বন করিয়া বিদ্যাসাগর মহাশয় বিধবা-বিবাহের আন্দোলন উথাপন করেন, মহারাজ শ্রীশচন্দ্র, তাঁহার বহুপুর্ব্বে সেই বচন-সহায়ে ব্রাহ্মণ পণ্ডিতের সঙ্গে তর্ক করিতেন। কৃষ্ণনগর রাজধানীর দেওয়ান বাহাদুর ৺কার্ত্তিকচন্দ্র রায় কর্ত্তৃক সঙ্কলিত ক্ষিতীশ-বংশাবলী চরিতে এইরূপ লিখিত আছে—পরাশরোক্ত যে বচন মূল করিয়া মহামতি শ্রীযুক্ত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, বিধবা বিবাহের অখণ্ড ব্যবস্থা দেন,