পাতা:বিদ্যাসাগর (বিহারীলাল সরকার).pdf/৬৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬১৪
বিদ্যাসাগর।

সমাজে প্রতিষ্ঠা হয়, কালোচিত ধর্ম্মপ্রতিপালনে। বিদ্যাসাগর তাহাই করিয়াছিলেন। নতুবা বল দেখি, অধ্যাপকের বংশে জন্ম লইয়া, ব্রাহ্মণ পণ্ডিতের সন্তান হইয়া, হৃদয়ে অসাধারণ দয়া, পরদুঃখকাতরতা প্রবৃত্তি পোষণ করিয়া, হিন্দু শাস্ত্রের প্রতি, হিন্দু ধর্ম্মকর্ম্মের প্রতি তিনি আন্তরিক দৃষ্টি রাখিলেন না কেন? দয়াময় কৃপা করিয়া, কাল ধর্ম্মসিদ্ধির মানসে তাঁহার হৃদয়ে পর-দুঃখকাতরতার স্রোত এতই প্রবল করিয়া দিয়াছিলেন যে, বংশ-পরস্পরাগত ধর্মভাব ও শাস্ত্রজ্ঞান কোথায় ভাসিয়া গেল। বিধবার দুঃখ দেখিয়া বিদ্যাসাগর গলিয়া গেলেন। বহু বিবাহে কুলীনকামিনীর ক্লেশ দেখিয়া তদ্বিমোচনে বিদেশী রাজার আশ্রয় লইলেন। কিন্তু কি হইতে কি হইল? হিন্দু বিবাহে কি পবিত্র সম্বন্ধ, ব্রক্ষচর্য্যের চরম উদ্দেশ্য কি, কোথা হইতে কোন্ মুখ্যধর্ম্মসিদ্ধির জন্য ব্রহ্মচর্য্যের ব্যবস্থা হইয়াছে, কিরূপে ব্রহ্মচর্য্যে ব্যাঘাত পড়িল, কিরূপ ব্যাঘাতে সমাজের কি অনিষ্টের সূত্রপাত হইয়াছে, বিদ্যাসাগর তাহা বুঝিলেন না, তাঁহার অপার দয়াপ্রবৃত্তি তাঁহাকে তাহা বুঝিতে অবসর দিল না। তাঁহার সেই দয়াগুণে তাঁহার পৈত্রিক ধর্ম্ম, শাস্ত্র সবই ভাসিয়া গেল। এইরূপ বিদ্যাসাগরের চরিত্রে দেখিবে, দয়াগুণেই,—আত্মনির্ভরতাগুণেই তাঁহার নিকট আর কিছুই তিষ্ঠিতে পারে নাই। বিদ্যাসাগর কালের লোক। কালধর্ম্মই তিনি পালন করিয়া গিয়াছেন। ইহাতে হিন্দুর অনিষ্ট হইয়াছে; হিন্দুধর্ম্মে আঘাত লাগিয়াছে। হিন্দুসমাজ বিশৃঙ্খলার স্রোতে ভাসিয়াছে। কিন্তু বিদ্যাসাগরের অপরাধ কি? যিনি তাঁহার হৃদয়ে এত দয়া—পরদুঃখকাতরতা দিয়াছিলেন, তিনিই জানেন, কেন এমন হইয়াছিল। নতুবা বড়