পাতা:বিদ্যাসাগর (বিহারীলাল সরকার).pdf/৬৭২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পরিশিষ্ট।
৬৩৫

সুশৃঙ্খল করিয়া, ব্যক্ত করিতে হইবে। আজিকার দিনে এ কার্য্যটীকে তেমন বৃহৎ বলিয়া মনে হইবে না, কিন্তু সমাজবন্ধন যেমন মনুষ্যত্ব বিকাশের পক্ষে অত্যাবশ্যক, তেমনি ভাষাকে কলাবন্ধনের দ্বারা সুন্দররূপে সংযমিত না করিলে, সে ভাষা হইতে কদাচ প্রকৃত সাহিত্যের উদ্ভব হইতে পারে না। সৈন্যলের দ্বারা যুদ্ধ সম্ভব, কেবলমাত্র জনতার দ্বারা নহে;— জনতা নিজেকেই নিজে খণ্ডিত, প্রতিহত করিতে থাকে, তাহাকে চালনা করাই কঠিন। বিদ্যাসাগর বাঙ্গালা গদ্য ভাষার উচ্ছৃঙ্খল জনতাকে সুবিভক্ত, সুবিন্যস্ত, সুপরিচ্ছন্ন এবং সুসংযত করিয়া তাহাকে সহজ গতি এবং কার্য্য-কুশলতা দান করিয়াছিলেন। এখন তাহার দ্বারা অনেক সেনাপতি ভাবপ্রকাশের কঠিন বাধা সকল অতিক্রম করিয়া সাফল্য লাভে সমর্থ হইয়াছেন। কিন্তু যিনি সেই সেননীর রচনাকর্তা, যুদ্ধজয়ের যশোভাগ সর্ব্ব প্রথমে তাঁহাকেই দিতে হয়।”

 এই বিষয়ে বিদ্যাসাগরের কৃত কর্ম্ম বিশেষত্বব্যঞ্জক। উল্লিখিত প্রবন্ধে আমি লিখিয়াছিলাম,—“বিদ্যাসাগর মৌলিক রচনায় বিশেষ কৃতকার্য্য হইতে পারিতেন। তিনি তাহা না করিয়া ‘বর্ণপরিচয়’ হইতে ‘সীতার বনবাস’ পর্য্যন্ত নানা পুস্তক রচনা করিয়া বাঙ্গালা ভাষা শিক্ষার পথ সুগম করিয়াছিলেন। তিনি যদি মৌলিক উপায়ে ভাষা শিক্ষার পথ সুগম না করিয়া মৌলিক রচনায় প্রবৃত্ত হইতেন, তবে আজ বাঙ্গালা ভাষার এত উন্নতি লক্ষ্য করিতে পারিতাম কি না সন্দেহ। আমাদের সৌভাগ্যের বিষয়, বিদ্যাসাগর যশের আশায় দাঁড় ধরিয়া দ্রুত ফেনপুঞ্জমাত্রের সৃষ্টি ____ পশ্চাতে হাল ধরিয়া বঙ্গভাষার