পাতা:বিদ্যাসাগর (বিহারীলাল সরকার).pdf/৭৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭২৪
বিদ্যাসাগর।

প্রবেশ করিলে লাট সাহেব ও দেশীয় রাজন্যবর্গ হইতে অন্যান্য সমস্ত উপস্থিত নিমন্ত্রিতগণ দণ্ডায়মান হইয়া ইঁহার অভ্যর্থন করেন। বৃন্দাবনে ইংরেজ শিকারিগণ কর্তৃক ময়ূরাদি পক্ষী হনন রাধাকান্তের চেষ্টায় বন্ধ হইয়া যায়। সকল বিষয়েই রাধাকান্ত তৎকালীন হিন্দুসমাজে অগ্রণী ছিলেন এবং কি ইংরেজগণ, কি দেশীয়গণ, সকলেই তাঁহ কে অদৃষ্টপূর্ব্ব শ্রদ্ধা-ভক্তি প্রদর্শন করিতেন। রাধাকান্ত দেবের ন্যায় সর্ব্বজনসমাদৃত, উন্নতমনা, নির্ম্মলচরিত্র মনীষী অধুনা বঙ্গদেশে বিরল।

 ইঁহার জীবন যেমন গৌরবান্বিত, মৃত্যুও সেইরূপ। মৃত্যুর তিন দিবস পূর্ব্ব হইতে ইনি সন্দি ভোগ করিতেছিলেন। মৃত্যুর দিন প্রাতে কিঞ্চিৎ দুগ্ধ পান করিয়া প্রিয় ভূত্যকে বলিলেন— “নবীন, আজ আমার শেষ দিন; আমার দাহ কার্য্য কিরূপে করিতে হইবে, তাহা পুরোহিত মহাশয়কে ইতিপূর্ব্বে বলিয়া রাখিয়াছি, তোমাকে আবার বলতেছি শুন। আমার প্রাণবায়, বহির্গত হইলে আমার দেহকে স্নাত, নব বস্ত্রাবৃত ও সুগন্ধিলেপিত করিয়া যমুনাকুলে লইয়া যাইবে। জীবিতকালে যে ভাবে আমি বসিতাম আমার দেহটি চিতার উপর সেই ভাবে বসাইবে। উপরে একটি চন্দ্রাতপ দিবে। চন্দন ও তুলসী কাষ্ঠে আমার দেহ পোড়াইবে। শুষ্ক তুলসী বৃক্ষ আমি সংগ্রহ করিয়া রাখিয়াছি। আমার দেহ ভস্মীভূত হইলে যখন অনুমান এক সের ওজন অবশিষ্ট থাকিবে, সেই অবশিষ্টাংশকে তিনভাগে বিভাগ করিয়া এক ভাগ কচ্ছপগণকে খাওয়াইবে। দ্বিতীয় ভাগ যমুনায় নিক্ষেপ করিবে এবং তৃতীয় ভাগটি বৃন্দাবনের মৃত্তিকায় গভীর করিস প্রোথিত করিবে।” এই উপদেশদান করিয়া এবং আত্মীয় বন্ধুগণের সহিত কথাবার্ত্তা