পাতা:বিদ্যাসাগর (বিহারীলাল সরকার).pdf/৯৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৪
বিদ্যাসাগর।

নিকট ঈশ্বরচন্দ্র প্রায় চারি পাঁচ শত উদ্ভট শ্লোক শিখিয়াছিলেন।[১]

 ব্যাকরণ শ্রেণীতে পড়িয়া তিন বৎসরের মধ্যে তিনি দুই বৎসর প্রচুর পারিতোষিক পাইয়াছিলেন; এক বৎসর পান নাই। সেই বৎসর তিনি মনঃসংক্ষোভে ও অভিমানে সংস্কৃত কলেজ পরিত্যাগ করিবার সঙ্কল্প করিয়াছিলেন; কিন্তু পিতা ও অধ্যাপকের অনুজ্ঞায় পারেন নাই। সে বৎসর যে তিনি থারিতোষিক পান নাই, তৎসম্বন্ধে কাহারও কাহারও মত এইরূপ,— “ঐ বৎসর প্রাইস্ সাহেব পরীক্ষক ছিলেন। ঈশ্বরচন্দ্র যাহা উত্তর করিতেন, তাহা ভালরূপ বিবেচনাপূর্ব্বক করিতেন; সুতরাং উত্তর দিতে বিলম্ব হইত; কিন্তু প্রায়ই তাহা নির্ভুল হইত। যে বালক বিবেচনা না করিয়া তাড়াতাড়ি বলিইয়াছিল, তাহা ভাল হউক, আর মন্দই হউক, সাহেব তাহকে বুদ্ধিমান জানিয়া অধিক নম্বর দিয়াছিলেন।” সংস্কৃত ব্যাকরণের পরীক্ষায় সাহেব পরীক্ষক সম্বন্ধে এরূপ হওয়া অসম্ভব নহে। সাহেব কেন, কোন কোন টোলের ও কলেজের অধ্যাপকের এরূপ সংস্কার ছিল ও আছে, যে বালক দ্রুত উত্তর করিতে পারে, সে নির্ভুল বলিতেছে; সত্বর উত্তর করায় তাহারা ভুল ধরিতে পারেন না” পণ্ডিত তারানাথ তর্কবাচস্পতি মহাশয় দুই একবার ঐরূপ বালকদের দ্বারা প্রতারিত হইয়াছিলেন।

  1. বিদ্যাসাগর মহাশয়ের সঙ্কলিত “শ্লোক মঞ্জরী” নামক গ্রন্থে বহু সংখ্যক উদ্ভট শ্লোক দেখিতে পাইবেন।বিদ্যাসাগর মহাশয় লিখিয়াছেন,—"এই উদ্ভট শ্লোক দ্বারা আমরা সবিশেষ উপকার লাভ করিয়াছিলাম, সন্দেহ নাই। আমাদের পাঠদ্দশায় যেরূপ আকার ও আলোচনা লক্ষিত হইয়াছিল, এক্ষণে আর সেরূপ দেখিতে শুনিতে পাওয়া যায় না। বস্তুতঃ উদ্ভট শ্লোকের আলোচনা একেবারে লুপ্তপ্রায় হইয়াছে।”