পাতা:বিপ্রদাস - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

# মা বলিলেন, দরকার কি ? আমার শ্বশুরের ইস্কুলের ছাত্ররা যখন দল বেঁধে বললে, বিদেশী লেখাপড়ায় দেশের সর্বনাশ হ’ল, তখন তাদের তুই তেড়ে মারতে গেলি ! আর তোর নিজের ছোটভাই যখন ঠিক ঐ কথাই বলে বেড়ায় তার কি কোন প্রতিবিধান করৰিনি ? এ তাের কেমন বিবেচনা ? বিপ্রদাস হাসি-মুখে কহিল, তার কারণ আছে মা। ইস্কুলের ক্লাসে প্রমোশন না। পেয়ে ও নালিশ করলে আমার সয় না, কিন্তু দ্বিজুর মত এম. এ. পাশ করে বিলিতি শিক্ষাকে যত খুশি গাল দিয়ে বেড়াক আমার গায়ে লাগে না । মা বলিলেন, কিন্তু এটা ? আমার টাকায় আমার প্রজা ক্ষ্যাপানো ? দ্বিজদাস এতক্ষণ নিঃশব্দে ছিল, একটা কথার ও জবাব দেয় নাই। এবার উত্তর দিল, কহিল, কালকের সভা-সমিতির জন্যে তোমাদের এষ্টেটের একটা পয়সাও আমি অপব্যয় করিনি । মা ঘরে ঢুকিয়া পৰ্য্যন্ত একবার ও পিছনে তাকান নাই, এখনও চাহিলেন না। * বিপ্ৰদাসকেই প্রশ্ন করিলেন, তা হলে হতভাগাকে জিজ্ঞেস কৰু ত টাকা পেল কোথায় ? রোজগার করেচে ? ঠিক এমনি সময়ে পর্দার বাহিরে টুং টাং করিয়া একটুখানি চুড়ির শব্দ হইল । বিপ্রদাস কান পাতিয়া শুনিয়া বলিল, ঐ ত তার জবাব মা ! তোমার নিজের ঘরের বে। যদি টাকা যোগায়, কে আটকাবে কািল দিকি ? মায়ের মনে পড়িল । কহিলেন, ও তাই বটে ! সতীর কাজ এই ! বড় মানুষের মেয়ে বাপের জমিদারী থেকে বছরে যে ছ হাজার টাকা পায়, সে আমার খেয়াল ছিল না। তিনিই গুণধর দেওরকে টাকা যোগাচ্চেন। একটুখানি স্থির থাকয়া কহিলেন, তোর সম্বন্ধ করতে বেয়াইমশাই নিজে যখন এলেন তখনি কৰ্ত্তাকে আমি বলেছিলুম, রায়বাড়ির মেয়ে ঘরে এনে কাজ নেই। ওদের বংশেরই তা অনাথ ৱায় বিলেত গিয়ে মেম বিয়ে করেছিল । ওরা পারে না কি ? ওদের অসাধ্য সংসারে क्र् िआप्छ ? বিপ্রদাস তেমনি হাসিমুখে চুপ করিয়া রহিল। সে জানিত সতীর অদৃষ্ট এ খোঁট আর যাবার নয় । তাহার বাপের বা ডুর সম্পর্কে কে এক অনাথ রায় বাঙালী-মেম বিবাহ করিয়াছিল। এ কথা মা আর ভুলতে পারিলেন না। সকলেই চুপ করিয়া আছে দেখিয়া তিনি পুনশ্চ বলিলেন, আচ্ছা থােক। বাবা কৈলাসনাথ এবার টেনেচেন, তঁকে দর্শন করে ফিরে আসি, তার পরে এর বিহিত করব । বলিয়া তিনি ঘৱ হইতে বাহির হইয়া গেলেন ।