পাতা:বিপ্লবী কানাইলাল - জ্যোতিপ্রসাদ বসু.pdf/৯৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

গোত্র নাই, দেশ নাই ও যেখানে মানুষ প্রকৃত ক্ষত্রিয় হইয়া আর্ত-তারণ ব্রত ধরে, সেইখানে তখনি সে নমস্য।’

 উপেন্দ্রের অভিমত— ‘জীবনে অনেক সাধুসন্ন্যাসী দেখিয়াছি; কানাই-এর মত এমন প্রশান্ত মুখচ্ছবি আর বড় একটা দেখি নাই। সে মুখে চিন্তার রেখা নাই, বিপদের ছায়া নাই, চাঞ্চল্যর লেশ মাত্র নাই—প্রফুল্ল কমলের মত তাহা যেন আপনার আনন্দে আপনিই ফুটিয়া রহিয়াছে।...প্রহরীর নিকট শুনিলাম ফাঁসির আদেশ শুনিবার পর ওজন তাহার ১৬ পাউণ্ড বাড়িয়। গিয়াছে! ঘুরিয়া ফিরিয়া শুধু এই কথাই মনে হইতে লাগিল যে, চিত্তবৃত্তি নিরোধের এমন পথও আছে যাহা পতঞ্জলিও বাহির করিয়া যান নাই।

 ‘তাহার পর একদিন কানাইলালের ফাঁসি হইয়া গেল। ইংরাজ-শাসিত ভারতে তাহার স্থান হইল না। না হইবার কথা! কিন্তু ফাঁসির সময় তাহার নির্ভীক, প্রশান্ত ও হাস্যময় মূর্তি দেখিয়া জেলের কর্তৃপক্ষেরা বেশ একটু ভ্যাবাচাকা খাইয়া গেলেন। একজন ইউরোপীয় প্রহরী চুপি চুপি আসিয়া বারীনকে জিজ্ঞাসা করিল—‘তোমাদের হাতে এ রকম ছেলে আর কতগুলি আছে? যে উন্মত্ত জনসঙ্ঘ কালীঘাটের শ্মশানে কানাইলালের চিতার উপর পুষ্পবর্ষণ করিতে ছুটিয়া আসিল, তাহারাই প্রমাণ করিয়া দিল যে কানাইলাল মরিয়াও মরে নাই।’

 

৮৮