পাতা:বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র - প্রফুল্লরঞ্জন রায় - শ্যামদাস বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র
৯৭

বোম্বাইয়ের জাহাজ ঘাটে আসিয়া লাগে। বন্দরে লক্ষ লক্ষ নরনারী এই দেশপ্রেমিক বীরের অভ্যর্থনায় দাঁড়াইয়াছিল; কিন্তু, ভারত-ভূমিতে পদার্পণ করিবামাত্রই ১৮১৮ সালের তিন আইনে তিনি বন্দী হইলেন এবং যারবেদা জেলে প্রেরিত হইলেন। গ্রেফ্‌তারের সময় দেশবাসীর উদ্দেশ্যে তিনি এই আবেগময়ী বাণী দিয়া যান—“স্বাধীনতার পতাকা উড্ডীন রাখুন।”—সুভাষচন্দ্রের গ্রেফ্‌তারের প্রতিবাদে ভারতব্যাপী দারুণ অসন্তোষের সৃষ্টি হয়। ১০ই মে তাঁহার গ্রেফ্‌তারের প্রতিবাদে “নিখিল ভারত সুভাষ দিবস” প্রতিপালিত হয়।

 শীঘ্রই ভারতবর্ষ ও ইংলণ্ডে এমন তুমুল আন্দোলনের সৃষ্টি হয় যে গভর্ণমেণ্ট তাঁহাকে বেশীদিন আটক রাখিতে পারিলেন না। ইতিমধ্যে ২০শে মে তাঁহাকে যারবেদা জেল হইতে স্থানান্তরিত করিয়া কার্শিয়াং এর গির্দ্দা পাহাড়ে শরৎচন্দ্র বসুর বাড়ীতে অন্তরীণ রাখা হয়—সেখান হইতে চিকিৎসার জন্য ১৭ই ডিসেম্বর কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। অবশেষে সুদীর্ঘ পাঁচ বৎসরকাল বন্দীজীবনের পর ১৯৩৭ খৃষ্টাব্দের ১৭ই মার্চ্চ সুভাষচন্দ্র বিনাসর্ত্তে মুক্তি লাভ করেন। তখনও তাঁহার শরীর সুস্থ হয় নাই। প্রায় ১মাস কাল তিনি কলিকাতায় ডাঃ নীলরতন সরকারের চিকিৎসাধীনে থাকিয়া বায়ু পরিবর্ত্তনের জন্য পাঞ্জাবের ডালহৌসী পাহাড়ে যান এবং সেখানে ডাঃ ধরমবীরের গৃহে পাঁচ মাস কাল কাটাইয়া কলিকাতায় আসেন। এই সময় কলিকাতায় কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক হইতেছিল। ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকের পর তিনি চতুর্থবার ইউরোপ যাত্রা করেন। ছাত্রজীবনের পর ইহাই তাঁহার প্রথম স্বাধীনভাবে ইয়োরোপ ভ্রমণ। ১৯৩৮ সালের ১০ই জানুয়ারী তিনি ইংলণ্ড পৌঁছেন। লণ্ডনে তাঁহাকে রাজোচিত সম্বর্দ্ধানা জ্ঞাপন করা হয়। সেখানে পার্লামেণ্টের বহু বিশিষ্ট সদস্যের সহিত তিনি ভারতীয় সমস্যা সম্বন্ধে বিশেষভাবে আলোচনা করেন।