পাতা:বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র - প্রফুল্লরঞ্জন রায় - শ্যামদাস বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র
১০৫

প্রতিরােধ সম্পূর্ণ অহিংস ধরণের হইবে। আমাদের সম্মুখে বর্ত্তমানে দুইটি পন্থা রহিয়াছে। পূর্ণ স্বাধীনতা অর্জ্জন না করা পর্য্যন্ত সংগ্রাম চালনা এবং সংগ্রামের পথে যে সকল ক্ষমতা আমাদের হস্তে আসিবে তাহা গ্রহণে অস্বীকার করা অথবা পূর্ণ স্বাধীনতার জন্য সংগ্রামকালে আমাদের অবস্থিতিকে সুদৃঢ় করা—এই দুই পন্থার একটি পন্থা আমাদিগকে বাছিয়া লইতে হইবে। নীতির দিক দিয়া উভয় পন্থাই গ্রহণযােগ্য। তবে আমরা যে পন্থাই গ্রহণ করি না কেন, ব্রিটীশ সম্পর্কচ্ছেদের প্রতি আমাদের চরম লক্ষ্য থাকিবে। যখন ঐ সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হইবে এবং আমাদের ভারতবর্ষে ব্রিটীশ প্রভুত্ব নিশ্চিহ্ন হইবে, তখনই তাহাদের সহিত মৈত্রীসুচক চুক্তিতে আবদ্ধ হইবার মত আমাদের অবস্থা হইবে। আয়ার্‌ল্যাণ্ডের রাষ্ট্রপতির ন্যায় আমিও বলিতে চাই যে, ব্রিটীশ জনসাধারণের প্রতি আমরা বিন্দুমাত্র বৈরীভাব পােষণ করি না। গ্রেট বৃটেনের সহিত আমাদের ভবিষ্যৎ সম্পর্ক নির্ণয় করিবার অধিকার অর্জ্জনের নিমিত্ত আমরা সংগ্রাম করিতেছি। আমাদের আত্মপ্রতিষ্ঠা লাভের পর ব্রিটীশ জনগণের সহিত সখ্যসূত্রে আবদ্ধ না হইবার কোন কারণই নাই।

 স্বাধীনতা লাভের পর কংগ্রেসের কর্ত্তব্য—জাতীয় সংগ্রামের ইতিহাসে কংগ্রেসের অবস্থিতি কোথায়—অনেক কংগ্রেসকর্ম্মীর মনেই এই সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা নাই। আমি জানি, আমাদের বহু বন্ধুর মনে এইরূপ ধারণা আছে যে, ভারতের স্বাধীনতা লাভের পর কংগ্রেসের উদ্দেশ্য সিদ্ধ হইয়া যাইবে এবং উহার আর কোন অস্তিত্ব থাকিবে না। আমি বলিতে চাই যে, স্বাধীনতা লাভের পরও কংগ্রেসের অস্তিত্ব মুছিয়া যাইবে না—বরং তখনই কংগ্রেসকে শক্তি, দায়িত্ব ও শাসনতান্ত্রিক ব্যবস্থার গুরুভার গ্রহণ করিতে হইবে এবং পুনর্গঠনমূলক কর্ম্মসূচীকে কার্য্যকরী করিতে হইবে। জোর করিয়া কংগ্রেসের মূলে কুঠারাঘাত করিলে দেশব্যাপী অনর্থের সৃষ্টি হইবে।